February 28, 2021

গোলাম রসুল

 নৌ অভিযান

সন্ধ্যায় শীতের চাঁদ মনে করিয়ে দিলো আমাদের সেই নৌ অভিযানের কথা
আর  প্রথম থেকে এই অবধি আমরা কিভাবে ভাসছি

দুঃখকে  লুকিয়ে রাখার জন্য তুমি যে পাহাড় দেখিয়ে দিয়েছিলে আমি সেভাবেই আছি
সামান্য একটা গোড়ালির মতো

এখন রাতের তারারা আমাদের নিয়ে যাবে সেই বিশ্বাসের দিকে
আবার ফিরিয়ে দেবে স্বপ্নের মধ্যে
ঠিক যেভাবে আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম জীবন

আমরা অদৃশ্য হয়ে যাবো সেই সব ভালোবাসাগুলোর মতো যেগুলো বানিয়েছিলাম উপাদানহীন

একটা দিন
ছোট্ট একটি মৃত্যু অন্তহীন

খোলা আকাশ আর পাহাড়
জলে ঘেরা অট্টালিকা




তৈমুর খান

 বিশ্রাম 

অনেক বিপ্লবের দিন কেটে গেলে 

আমরা নিরিবিলি খুঁজতে বেরিয়েছি 

অনেক মৃত যুগ পার হয়ে 

একটি ধূসর যুগে আজ 


এখানে চিৎকারগুলি পড়ে আছে 

হাওয়া আজও ক্রন্দনধ্বনি বয়ে আনে 

রক্তঘ্রাণে মৃতদেহগুলি হাঁটে 

আমরা ছায়া খুঁজি 

অনেক নীরব ছায়ার কাছে 


পাখিদের পাঠশালা, নদীর দোকানে 

আর অরণ্যের সবুজের কাছে 

আমরা কিনতে চেয়েছি বিশ্রাম 


বিশ্রাম পাওয়া যায় ? 


বিশ্বাসী নূপুর বেজে উঠুক তবে 

কাছে এসে হাত ধরে বসুক 

আমরা অপেক্ষায় আছি… 









সাত্যকি

 কাগজের জাহাজ 


ইচ্ছেরা যখন ডানা মেলতে পারছে না 

এক ঘর স্তূপের মধ্যে মুখ গুঁজে চেয়ারে, এক কোণে  

ক্রমশ ক্ষীণ জমানো উৎসাহের প্রবাহ 


ঠিক এখনই আকাশের মেঘ সরাই দুহাতে 

প্লেন ডাকি,তাদের ডানায় পাঠিয়ে দিই  

দেখতে দেখতে মেঘের ভাঁজে হারিয়ে যায়

 

একটা মেঘ... দুটো মেঘ... 

চোখ ফেলে দাঁড়িয়ে থাকি... 

 

খানিক পরেই মেঘের শরীর ধুয়ে আবির খেলা

মেঘের শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে ঘরের এই বারান্দায় 

আমার এই বিস্তৃণ হাতের অংশ জুড়ে...  





সব্যসাচী পণ্ডা

 ফুঁ

জায়মান বলে নেই কিছু
চলে গেছে দীর্ঘ সময় ছায়াময় কাল
চলমান নীরবতায় লেগে আছে কোমল বাতাস।
দিনগুলি এমনি এমনি চলে গেল 
একবার শুধুমাত্র নিঃশর্ত ক্ষমায় চোখ তুলে চাও 

তারপর সব অভিমান ভুলে
এসো বসন্ত বাতাস হয়ে...অন্তরে ফুঁ দাও।




তুলসীদাস ভট্টাচার্য

 মায়াশরীর 


মায়াশরীরের কোটরে পচগলা ভ্রুণ

এখন আর কবিতা লিখি না

ঘুম পাড়ানোর জন্য এখন আর কেউ
চাঁদের কথা বলে না 

শুকিয়ে যাওয়া নদীর স্রোতচিহ্ন বুকে নিয়ে 
সনেট থেকে দূরে ক্ষয়ে যাওয়া শরীরে
ভেসে ওঠে আধপোড়া পৃথিবী।




নিঃশব্দ আহামদ

 দরোজার কাছে৷


উড়ে উড়ে আসি,দূরান্তর-সাইবেরিয়ান পাখিদল,ভীড় জমায় 
সোনাদিয়া দ্বীপ
উষ্ণতা সন্ধান 
আর এখানে হিম হয়ে আছে বুক
কবে খুলে যাবে দোর,কাতর আগল বুক৷

গতিরোধকসব দাঁড়িয়ে আছে প্রবল বিরক্তির কাছে
আর ত্রি যানটি প্রতিবন্ধকতার কবলে তাড়া করে ফেরে মাইলের পর মাইল,চোখ জুড়ে আসে সংশয়ে বহুবার
কবে সময় হবে ফেরার,দরোজায়-

যে ই খুলে যাবে দোর,কাশবন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেউ
অথবা চাঁদশোভায় সয়লাব এই যে ঘর
কিংবা বহুকাল ছটফট শান্ত কপোতি এক
ডানার সবকটা পালক মেলে ঢেলে দেবে সঞ্চিত উম৷

আমার যেনো আশ্রয় নেই কোথাও,নেই বিশ্রাম
চোখের পরে সমস্ত দরোজাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে কে?
চড়াই উতরায় পেরিয়ে যে অভিষ্টতা
হর্ষ ধ্বণী হয়ে তার নূপুর ঝংকার -তোড়জোড় লেগে গেছে ফেরার সে গন্তব্যে৷





সমাজ বসু

 অন্ধ

আমি অন্ধ নই-
তবু অন্ধের মত ভালবাসি তোমাকে,
বয়স্ক রাতে ভিআইপি রোডে ছুটে যাওয়া
গাড়ির মতই উদ্দাম দুর্নিবার।

দেখ,ঝকঝকে পরিষ্কার চোখেও-
তোমার ভালবাসায় আমি অন্ধ।

 ভাষা

বহুদিন বেড়ালের মত মিউ মিউ করে
দুধ মাছ খেয়েছি- কিংবা
প্রভুর পাহারায় ঘেউ ঘেউ শব্দে কেটে গেছে রাত- ভুলে গেছি নিজের ভাষা,
অন্ততঃ একবার আমাকে
মানুষের ভাষায় কথা বলতে দাও।









সুফল সান্যাল

কিংকর্তব্যবিমুঢ়

আমি এবং হতাশা মুখোমুখি বসে
একাকী, জানালার বাইরে দেখি জ্বলে
নিয়ন লাইট রাস্তা জুড়ে ছায়া ছায়া
অবয়ব সিলুয়েট ভূতেদের মত
শনিবার রাত্রে কারো ছাদে পার্টি চলছে
মিউজিকের তালে নাচছে আলোগুলো
আমিও সুর মেলাতে চাইছি তখন
যদিও কিংকর্তব্যবিমুঢ়...

  অথচ সংগ্রাম

এখানে সামুদ্রিক ঢেউ
আসে আগামীর দুশ্চিন্তা নিয়ে
বিপন্ন সময়ের ইস্তেহারে
স্বাক্ষর করি আমি
অভাগার সাগরে লবণের মাত্রা
বাড়ে উত্তরোত্তর
সংগ্রাম সংগ্রাম
এখনো যুদ্ধের ডঙ্কা বাজছে
তীক্ষ্ণ তলোয়ার হাতে
ছুটে আসছে
আমারই অতীত
আমিও শূন্য হাতে
চলেছি ভবিষ্যত...








দীপ্তেন্দু বিকাশ ষন্নিগ্রহী

 দেখা

দেখা হয়ে যায় হঠাৎ এক পড়ন্ত বিকেলে
গোধূলির সন্দেহি রঙ মেখে সঙ সেজেছিলো
বিকেলের বাদামওলা
দেবদারুর ডগায় শেষপাতের রোদ
পাখির ডানায় ক্লান্ত বাতাস 

শুধু বর্ণনা দিতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছি মুহুর্ত 
দেখা হওয়ার পরও 
খসে যাওয়া শুকনো দিনের মসমস শব্দ
আমার সারা শরীর পেচিয়ে শীতল সাপ... 






ইন্দ্রাণী পাল

 শীত

বাতাস বইছে। আমাদের দেখাশোনা হল।

অন্ধকার ঢেকে ফেলছে
আমাদের বুক ও চিবুক

আলপথ ধরে কে যেন ছুটে চলেছে!
সে আমার হাত ছোঁয়
নদীধারে মেঘ ঝুঁকে আসে।

ওপারে সূর্যাস্ত লাল, শীত করে খুব।





ঐন্দ্রিলা মুখার্জী

আলোছায়ার মিউজ়িকাল চেয়ার-ঘুলঘুলিদের মন,
রাস্তার বুকে গ্ৰামোফোন পাতে বসন্তপাতা-রঙ্গন।
গোলাপী চিঠির বয়সে দশক,পোকায় কাটে অভিমান।
স্ট্রিটলাইট তো অনেক হলো,একটু না হয় বাজুক ট্রাম।
টুকরো টুকরো আকুলিবিকুলি আর তৈলচিত্রের পাতা,
চশমার কাঁচ শানিয়ে তোলে প্রেমিকচোখের পাল্টাহাওয়া।
রাত গোনেনি ফ্লোরেন্সের ঢেউ,সুদ কষেনি দেওয়াল লিখন।
রক্ত-নদী আজ‌ও জানে কোথায় আছে আতর-স্লোগান।
চোখ যেন তার কাঁচের কুয়ো,বোতাম খোলা বুমেরাঙ।
কালবোশেখির তারিখ এলে অদ্বিতীয় মল্লার রাগ।
অভিসারের সাত-সতেরো-পাঁচ-একশোর মেহেন্দী আঁকতে শেখেনি কেউ।
তবু কী বিক্রি হয়নি লাখখানেক সবুজ?ওরা নাকি বসন্তের ফেউ।
একদল যৌবন নাকি মগধে ফিরেছিল,চন্দন-আবীরের আশায়।
মদনোৎসব তো আজ জীবাশ্ম।বসন্ত শুধুই মন্দিরা বাজায়।



দীপঙ্কর সরকার

 বৈরাগ্য 

রোদ রং মুছে নেওয়া বিকেল এখন সব জৌলুস
গেছে চুরি , অন্ধকার নামল বলে দ্বিতীয়ার চাঁদ
ফুটতে এখনো কিছু বাকি -- এই ফাঁকে নিজেকে
সাজাও বহুরূপী । অনর্গল কথা বলো হরবোলা
তুমি , শাকান্নভোজী একাহারী অহঙ্ বলতে কিছু
নেই , একবিন্দু ক্রোধও থাকে না ঝুলিতে তোমার ।
এমন ভিখারি বহুকাল দ্যাখেনি পৃথিবী -- সব রং
মুছে নেওয়া বিকেলই জানে  তোমার যা কিছু 
নির্লোভতা  -- সবটুকুই কৃষ্ণ চতুরালি ।

হাওয়া 

যা যা ঘটবার ঘটে গেছে 
রটনা পঙ্ক্তির মতো উড়ে গেছে হাওয়া ।
হাওয়ারা মেধাবী বড় , সহজেই বুঝে নিতে
পারে মানব যাতনা । ফুলেদের দুঃখ কষ্ট
সেও বোঝে , নদীর অন্যমনস্কতা মেঘেদের
খুনসুটি সবই তার জানা । রৌদ্র- ছায়ার 
লুকোচুরি কানামাছি খেলা কোনোটাই
অজানা নয় স্তব্ধ দুপুরের গন্ধ মেখে রটনা
পঙ্ক্তির মতো তাই তার উড়ে যাওয়া ।


বিকাশরঞ্জন হালদার

 অক্ষর জোয়ার



অনু-স্বর আজ উনো জমির খড়কুটো।অঙ্গের গহনে মরে অক্ষর জোয়ার বিস্ফারিত চাঁদ,ঠোঁটে ধরে জ্যোৎস্না তার, উড়ে যায় যেকোনো বুকে !  

নুয়ে পড়া বাতাস বার বার তাকে ডাকে !পথের ঢালে বসতে বলে কাছে 

মিয়নো হেসে,অপরিসীম ক্লান্তিতে ডুবে যেতে হয় অথচ আমাকে ...




সুচেতা মন্ডল

আত্মপ্রেম            


আজ আর বিশেষ কিছুই
 বলতে পারি না ।
শুধু চেয়ে থাকি অমলীন চোখে।
কি নির্মেদ স্নেহে 
অন্ধকারকে  গ্রাস করেছ,
অন্তর আত্মাকে ছিনিয়ে এনেছ পিশাচ পুরী থেকে।


এখন
দুজন দুজনকে দেখলেই চিনতে পারি।
তুমি খানিক বেশি ই পারো।
             আর আমি দেখি 
              আমার মধ্যেকার তুমি কে।



শ্রীমন্ত সেন

 সময়-মিতাক্ষরা

পথ কেনাবেচা সেরে ঘরে ফেরে
দিনান্তের পরিশ্রান্ত আলো,
হাতের আঁকের মত নিরুদ্বিগ্ন মন
জল-কিৎ-কিৎ খেলে
জলের বিস্তারে
 
কিছু শাশ্বত মুহূর্ত সোজাসুজি ছুঁড়ে দেয়
আখর-কথার ক্যানভাস
ভেঙে যায় অকারণ কিছু কানাকানি
বসে থাকা মৌন রঙ
পা বাড়ায় গন্তব্য-উদ্দেশে
আটপৌরে ব্যথাগুলি
চুপ-চাপ পড়ে থাকে অলস মুখোশ প’রে
 
শুধু বাঙ্ময় সময় ভেঙে ভেঙে খায়
নীরব প্রলাপ যত  

 

সুনন্দ মন্ডল

আলো           ‎ 

রাত হলেই গভীরতা বাড়ে অন্ধকারের
ছুটে যায় অনমনীয় টানে।

সূর্যের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যেন
কিছুটা সময় ধার করে ফিরেছে
আকাশের কোণে কোণে।

পথ ও প্রাসাদ
চেয়ে আছে কোনো এক সংকেতে!
জীবনের অর্ধেক সেদ্ধ-পোড়া।

তবুও দূর হয় আঁধারের ক্লান্তি
বেঁচে ওঠে আগামী তারিখ।



গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...