Showing posts with label সুব্রত চক্রবর্তী. Show all posts
Showing posts with label সুব্রত চক্রবর্তী. Show all posts

March 28, 2021

সুব্রত চক্রবর্তী

 বেলা শেষে 

              

রাস্তার পাশে পলিথিন পেতে বুড়িটি বসেছে।

বুড়ির পাশে পা ছড়িয়ে বসে তরতাজা সব্জিগুলি।

ডানপাশে কোলের ছেলের মতো শুয়ে লকলকে পুঁই।

ছেলে বেড়ে উঠলে বউ আসে ঘরে। 

নধর কুমড়ো বামপাশে সুখী বউমার মতো, 

স্বামী সোহাগে সুখে থাকতে ফ্ল্যাট উঠে। 

কোল ঘেঁষে আদুরে নাতিটি 

নেওটা পালংশাক। 

ফ্ল্যাট থেকে নাতির হাসির শব্দ মোবাইলে আসে। 

নাতনির বিয়ের বয়স হয়।

পাকা কামরাঙ্গা তার লাজে রাঙা গাল।

ফ্ল্যাট বাড়ি আলো- সাজে। 

প্রিয় পরিবার বুড়িকে বসায় ফ্ল্যাটের পাঁচ হাত বারান্দায়। 

বুড়ি রোদবেলা নেড়েচেড়ে দেখে।

গ্রিলের ফাঁকে উঁকি মেরে সব্জির ক্ষেত খুঁজে। 

সাজানো সংসারে বেলা গড়ায়। 

দিনের শেষে ডাঁটি ভাঙা চশমার কাঁচে

চুপসানো করলার ঝুড়িতে বুড়ি নিজেকেই খুঁজে। 






November 29, 2020

বিশেষ গদ্য।সুব্রত চক্রবর্তী।

এক পৃথিবী দেখতে চেয়ে...


সদ্য শীত এসেছে। হিম নামছে সকাল সন্ধে। সকালের
আলো ফুটলে আলোর খোঁজে পথে হাঁটে পথভ্রষ্ট পথিক। 
এক পৃথিবী দেখবে বলে। হাঁটতে হাঁটতে তার দেখা হয় আততায়ী হাওয়ার সঙ্গে। হাওয়া অতর্কিতে এসে আক্রমণ শানায়। জামার ভিতর পালক বুকে এসে বিঁধে।গাছের দল কুয়াশা মেখে মূক দর্শক হয়ে বেবাক দাঁড়িয়ে থাকে।কথা কওয়া বারণ তাদের।অনিবার্য কারণে তাদের মুখ ভার। ঘাসের  উপর ভেজা শিশিরেরও মন ভারী। রুখা মাটি কেবল বৃথা চেষ্টায় প্রাণপণে মুখ লুকায় ভেজা ঘাসমূলে। শীতের সকালে এক পৃথিবী দেখবে বলে আর এক পৃথিবী পথিক রেখে এসেছি ঘরে। ফেলে আসা পৃথিবী তখনো ঘুমে, উষ্ণ ওমে। সেখানে লেপের নিচে ভাঙছে রাতজাগা খাট। নীল আলো গড়াগড়ি খায় ভোরের বিছানায়। দরজায় কড়া নাড়ে দু'কাপ কড়া কফি। বারান্দায় চায়ের কাপে ছাই হয় দামী ব্র্যান্ডের সিগারেট। আদুরে গলায় গলা জড়িয়ে নিচু স্বরে পাশ থেকে কেউ ডাকে "এই, ওঠো না! কাজের মাসি! ঘর মোছা বাকি! তোমার মা! চা ঢেলে জানলায়! উঁকি ঝুঁকি! বাবা বারান্দায়! সিগারেটের উৎকট গন্ধ!" এই পৃথিবীতে ভোর হয় দেরিতে। আলমারিতে তোলা থরে থরে আদরের বাচ্চাটির বেবিফুড। তবুও শেষ রাতে ক্ষুধায় শিশু।বিছানায় অমৃত ভাঁড় খুঁজে এপাশ ওপাশ।কোন রাই কিশোরী শীতবস্ত্র শরীরে আঁটোসাঁটো সেঁটে হারমোনিয়ামের রিডে সুর তুলে "শীতের হাওয়ায় লাগলো নাচন আমলকির ওই ডালে ডালে"।পাশে তার ধোঁয়া ওঠা কমপ্ল্যান কাপ।


হাঁটতে হাঁটতে এগোতে এগোয় পথিক। আর এক পৃথিবী ডাকছে তাকে। ভোরের আগে জেগে ওঠে সে জগৎ। সেখানে খোঁচা খোঁচা খেজুর গাছে প্রেমের রস খুঁজে প্রেমিক শিউলি। রস ফুটিয়ে ভালোবাসার জন্ম হয় শীতের ভোরে। পথের ধারে শুকনো খড়ে ধিকিধিকি জ্বলছে তাপের আগুন। হাত পা সেঁকে নিচ্ছে অথর্ব বুড়োর দল। নেংটো শিশুরা আদুল গায়ে নাচছে ধুঁয়া মেখে। সাফাই ওয়ালার বাঁশিতে হেমিলনের বাঁশি ওয়ালার সুর। বিরাম নেই কাজে ও কর্তব্যে। অলিগলি হেঁটে যায় সে প্রতিটি ভোরে। পথিক হাঁটছে। হাঁটছে কারণ এক পৃথিবী দেখবে বলে।দেয়ালের বাইরে পৃথিবী দাঁড়িয়ে আছে সূর্য সাক্ষী রেখে।কোন লেপ এই পৃথিবীর কাউকে কোনোদিন ভুলেও গলা চেপে ধরে না, নকশা করা পেয়ালাতে গরম চা অপেক্ষা করে না কোনোদিন। শুধু ডাক আসে নিরন্তর "গ্রাম ছাড়া ওই রাঙ্গা মাটির পথ..."

 হাঁটছে পথিক সেই পৃথিবী দেখবে বলে।





October 25, 2020

সুব্রত চক্রবর্তী

 নদী জীবন 


ঘরের পাশে নদী না থাকলে জীবন খাঁ ‌‌খাঁ করে।
শীতকালে নদীর চরে মনের শোক শুকিয়ে নেওয়া যায়।
ভরা বাদলে লুকিয়ে রাখা যায় চোখের নিচে কালশিটে দাগ।
নদী শুরুর গল্প জানে
যেখানে পাষাণ পাহাড় গলে বরফ,বরফ থেকে  ঝর্ণা।
নদী অন্তরে বিরহ বোঝে 

অশ্রুলেখা নদী তাই চিরকাল সমুদ্রে মিশে।

নদী প্রেম জানে 
শ্রাবণে নদীর বুকে অবিরাম ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ।
নদী পাড় ভেঙে পাড় গড়তে পারে
আলো ও আঁধারে কারো বুকে নদীর শব্দ শুনে কেউ।

September 06, 2020

সুব্রত চক্রবর্তী

 যে পথ আমার


ওই পথটা   আমার আবাহন 

এই পথটা   তোমায় দিচ্ছি আমি। 

ওই পথটা   ধুলায় ধুলায় ধূসর

এই পথটা   সুখের অন্তর্যামী। 

ওই পথটা   অকুস্থলের নদী 

এই পথটা ‌‌‌  চন্দ্রমুখী আলো।

ওই পথটা   নষ্ট গাঁয়ের বধূ 

এই পথটা   সহজ সরল ভালো।

ওই পথটা   কালো বিড়াল কাটে 

এই পথটা   শান্তিজলে স্নান।

ওই পথটা   পাপ ও নরক চেনে 

এই পথটা   চেনা স্বর্গধাম।

ওই পথটা   পায়ের প্রথম ছাপ 

এই পথটা   কলম্বাসের দাস।

ওই পথটা   ঝড় ঝাপটা বুকে

এই পথটা   কুশল ঘরে বাস।

ওই পথটা   আমারই থাক ভাঙন নদীর দেশ

এই পথটা  বাঁকের অভাব শুরুর আগেই শেষ।


গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...