Showing posts with label একটা জীবন তোমায় ছাড়া(২০১৯) : মনখারাপ আজ নস্টালজিয়া।।পামেলা পতি. Show all posts
Showing posts with label একটা জীবন তোমায় ছাড়া(২০১৯) : মনখারাপ আজ নস্টালজিয়া।।পামেলা পতি. Show all posts

October 28, 2020

পামেলা পতি

 একটা জীবন তোমায় ছাড়া(২০১৯) : মনখারাপ আজ নস্টালজিয়া


কবি স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর লেখা "একটা জীবন তোমায় ছাড়া" কাব্যগ্রন্থটি বিরহ বিষাদের চেনা পরিচিত গলির মুখে এনে দাঁড় করায় পাঠককে। প্রত্যেকটি কবিতায় ফুটে উঠেছে মানুষের দ্বীপসম অবস্থান; পথ চলতে গিয়ে যাদের একসময় হাত ধরে হাঁটার অভ্যেস ছিল, ডাকনামে ডেকে উঠতো যারা একে অপরকে, এই কাব্যগ্রন্থ উঁকি দেয়  তাদের বর্তমান নিঃসঙ্গ বারান্দায়। ভাষা দেয় মানবমনের সেইসমস্ত গোপন ঠিকানার, যা ভুলে গিয়ে মানুষ নিজেই একসময় বাড়ি ফিরে উঠতে পারেনা। বেঁচে থাকে নতুন ঠিকানায়,ছন্নছাড়া বিষাদ সুখে।

মানুষ বেশিরভাগ সময়ই প্রিয়জনের মৃত্যু মেনে নিতে পারেনা। কেন জানেন? যে মানুষগুলো আমাদের সামনে হেঁটে চলে বেড়ায়, কথা বলে, স্পর্শ করে, তারা এক লহমায় এসব দায়দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমাদের অল্প একটু অভিমানে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যারা বহু আবদার মেটাতে পারদর্শী ,তাদের নিথর দেহ বিনা নোটিশে মন থেকে সব আবদারের ঘর খালি করতে বলে। নিজের ছোট্ট খোকাকে একটু সময় না দেখতে পেয়ে যে মা সারা পাড়া তন্নতন্ন করে খুঁজতো এবং খুঁজে পাওয়ার পর নিজের কষ্ট উজাড় করতে ঘা কতক দিয়ে বসতো, সেই মা ই যখন কোনও কারণে খোকাকে ফেলে জীবন থেকে মুক্তি নেয়, তখন খোকার শত অভিমান, অঝোরে কান্না কোনোকিছুরই দাম থাকেনা তার কাছে। মৃত্যু পরবর্তীকালে আমাদের প্রিয়জনেরা ঠিক এতটাই নিষ্ঠুর। 

এ তো গেল মৃত্যুরূপী বিচ্ছেদের কথা। কিন্ত একই গলিপথ বেয়ে যারা ফিরতো একসময়,হঠাৎ কোনও ঝড়ে এক ধাক্কায় যাদের পথ আলাদা হয়ে যায়, নিজেরা নিজেদের মনের দরজায় চাবি দিয়ে রাস্তায় আবার নামে একাকী, কে ভোলায় তাদের? আচ্ছা, মৃত্যু পরবর্তী বিচ্ছেদ যদি পূর্ণচ্ছেদ সম হয়, মানুষের আবেগী মন কী কখনও এই এক দুনিয়াতে থেকেও  একইসাথে না থাকার গল্পে পূর্ণচ্ছেদ মেনে নিতে পারে? নাকি তারা বেঁচে থাকে কোনও এক কল্পনার সেমিকোলনের আশায়? নাকি তারা ঠিক করে নেয় "দূর হতে আমি তারে সাধিব/গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব"? 

         শহর এবং শহরতলির জীবনযাপন আলাদা হলেও দুটো পরিণত মানুষের পরস্পরের প্রতি আবেগের গল্পগুলোয় বড্ড বেশি মিল; জায়গার ব্যবধানে যুগের ব্যবধানে এই আবেগের খুব একটা অন্তর নেই। পাল্টায় শুধু আবেগের বহিঃপ্রকাশ। ভেতরের চুপিচুপি জমা থাকা আবেগ মোটামুটি  

একইরকম। সেই আবেগী দুটো মন যখন একইপথে হাঁটতে গিয়ে তাল মেলাতে পারেনা, তখন শুরু হয় একাকী পথচলা। মৃত্যু হয় নিজের ভেতরে থাকা পুরোনো কিছু পরিচিতির, হঠাৎ করে সে অনুভব করে "ট্রামের শহর যেমন করে অটোর হল/তেমন করে আমিও হলাম তোমায় ছাড়া"! শহরতলির গল্পে পাল্টায় শুধু দৃশ্যপট,সেখানেও " তবু তো সেই ফোন আসে না জন্মদিনে/বছর কাটে... ফোন আসে না জন্মদিনে "। পড়ে থাকে " একা বাসস্টপ", "ফাঁকা বাসস্টপ", "মনমরা হাওয়া","ফাঁকা প্যান্ডেল", "শেষ বিকেলের ট্রেন স্টেশন", "ফেলে যাওয়া রুমাল", এবং "শূন্য দীপাবলি"। একটু উষ্ণতার খোঁজে হারিয়ে যেতে বসা মানুষটির শহরেও কিন্তু  শীত আসে । "দীর্ঘ মেলানকলি" র গাম্ভীর্য মুখে মেখেও তার অবচেতন মন বলে ওঠে, "আমি ভয়ে হাত বাড়িয়ে তোমায় খুঁজি। একদিন তোমার সঙ্গে গুটিশুটি ঘুমব  বলে/জেগে থাকি সারা জীবন। " শীতল বাস্তবে চোখ খুলে সে বুঝতে পারে ", লেপ ভেঙে উঠে একা বসে থাকি/ পালক ছড়িয়ে কবে গেল পাখি/আমায় একলা রেখে! / কেউ-নেই-পথ পাইনের বনে হারিয়ে গিয়েছে বেঁকে"। বাস্তব এবং কল্পনার বিস্তর ব্যবধানে শান্তিচুক্তি করতে এগিয়ে আসে ইন্টারনাল মোনোলোগ।শুরু হয় একা একা কথা বলা, জবাবদিহি করার অভ্যেস, ঠিকানা ভুলে চিঠি পাঠানোর সতর্কতা। জানতে ইচ্ছে করে তার, "সেই সত্তর সালে আমাদের দেখা হলে/তুমি কি এমনই নীল রঙের শাড়ি পরে/একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে নির্জন কোনও বাসস্টপে? " কৌতুহলের শেষ যখন হয়না তখন অসহায় আবেগী মানুষ কিছু দূর্বল করে দেওয়া সত্যির মুখোমুখি দাঁড়ায়। এবং তার উপলব্ধি হয় "আসলে জীবন মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে বেঁচে থাকা পাওয়া/সালোকসংশ্লেষ আমি তুমি এর রোদ জল হাওয়া"। 

              " একটা জীবন তোমায় ছাড়া" ভাষা দেয় এমন বহু চিরপরিচিত আবেগকে,যুগবিশেষে বা স্থানবিশেষে যেসব আবেগের বোধহয় সেরকম তারতম্য নেই। উপন্যাসের মতো দীর্ঘ এক পথচলার স্বপ্ন বিভিন্ন কারণে ছোটোগল্প হয়ে শেষ হলেও, শেষের রেশটুকু থেকে যায় আজীবন। কেমন হয় সেই থাকা? কবি স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর এই কবিতা সংকলনের প্রায় প্রত্যেকটি কবিতার আনাচকানাচে ফুটে উঠেছে সেই অপ্রত্যাশিত নিঃসঙ্গ জীবনের কথা, যেখানে টুকরো কিছু গল্পকথা স্মৃতির পাতা থেকে ফিরে আসে বারবার, যেখানে "... যা হলে বেশ হত আর যা হলে বেশ হবে/সেসব আর হবে না কক্ষণও"।

গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...