August 29, 2021

গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর 


অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা 

হেসে ওঠে মাঝরাতে 

কোনও পিয়ানোর সুরে 


খোলাচুল উড়ে আসে তার 

বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা 

দেখি দেখি চাঁদ গলে গেছে সারা দেহে 


সমস্ত যুগের রক্ত বয়ে গেছে 

এই পথ প্রগলভ অতীত 

তবুও নিহিত এক মর্মের জানালা 


চেতনা ফিরে পায় মৎস্যমুখী মেয়ে 

আকাশে গহনে জলে লেখে আলপনা 

বিন্দু বিন্দু বেঁচে ওঠা ঘুম 


ঈশ্বর

লীলাকে ডাকিনি কাছে 

শরীরই ঈশ্বর হয়ে আমার শরীরে শুয়ে আছে


নিজস্ব ফাঁকা আস্তাবলে আজ কোনও ঘোড়া নেই 

সব ঘোড়া অশ্বিনীকুমার হয়ে গেছে 


প্রাচীন পৃথিবীর রহস্য-আলোয় জল খেতে এসে দেখি 

সব ঝরনায় আমারই ঈশ্বর হেসে ওঠে…. 


বাসরবাগান


সব ফুল ফুটবার আগেই 

সৌরভ এসে উপস্থিত হয়েছে বাগানে 

ফুলের দিকে তাকালেই 

                      জড়িয়ে ধরছে হাসি 

                             স্বপ্নের সেই পেলব পাপড়িগুলি 

এক একটি ইংগিত ডাকছে আমাকে 

আগাছার ভিড় ঠেলে 

লতানো গাছের বাহু ঠেলে

                         এগিয়ে চলেছি 

আজ ঘাসে ঘাসে শয্যা পাতা আছে 

পাতায় পাতায় আশ্চর্য কাহিনি... 


সৌজন্যে 


কোথাও কোথাও পরমজনেরা থাকে 

                                                       দেখা হয় 

                         তাদের সৌজন্যে আহ্লাদ পাই আমি 

দুঃখের ঘষা ঘষা দাগগুলি 

                                                   মুছে ফেলি 

                আর ক্ষত স্থান জুড়ে রক্তজবা ফোটাই                                 

শোকের ঝরনার তীরে 

                       কুসুম কুসুম সকাল হলে তার

           আনন্দের প্রতীক্ষায় রোদ খুঁটে খাই 


জলজ


নিজেকে ব্যঞ্জনা ছাড়াই তোমার কাছে উপস্থিত করি 

আমাকে স্পর্শ করো —


বয়স কি গোখরো সাপ ছুঁলেই ছোবল দেবে ? 


শ্যাওলা সরিয়ে দ্যাখো, স্নিগ্ধ জলের তলায় 

আমারই নিভৃত অঙ্কুরোদ্গম.... 


নষ্ট সিনেমা 


করতলে নদীর বিয়ানো চরাচর 

নৌকা চিহ্ন, বাঁশিব় জীবাশ্ম 

আর খাঁ খাঁ শূন্য বিস্ময় 


বিমূঢ় যুগের ছবি 

ক্যামেরায় সাঁতার দিচ্ছে 


বিকল্প শিকারি এসে শুরু করছে অন্ধবিপ্লব 



কবি পরিচিতি : জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে। 

পিতা ও মাতা :জিকির খান ও নাওরাতুন। 

পড়াশোনা :বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি। 

পেশা : উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক । 

প্রকাশিত কাব্য : কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃষ্টিতরু (১৯৯৯), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা (২০০৪), বিষাদের লেখা কবিতা (২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ (২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর (২০০৮), প্রত্নচরিত (২০১১), নির্বাচিত কবিতা (২০১৬), জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা (২০১৭) ইত্যাদি। 

পুরস্কার : কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার ও দৌড় সাহিত্য সম্মান, নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার, কবি আলোক সরকার স্মারক পুরস্কার ইত্যাদি ।

ঠিকানা : রামরামপুর (শান্তিপাড়া), রামপুরহাট, বীরভূম, পিন ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।










          

2 comments:

  1. কবিতাগুচ্ছ বেশ ভালো লাগলো।ধন্যবাদ মহুয়ার দেশ

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লাগলো

    ReplyDelete

গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...