চক্ষুদান
সেই কবেকার ডাকের সাজে মিথ্যার প্রতিমা---
চক্ষুদান বোধন আমন্ত্রণ কিংবা আরতি
সবই চলছে।
কি অসম্ভব রঙচঙে উৎসবে মেতে আছি---
শ্লাঘায় ভণিতায় আলোর অভাবে নেমে আসছে
অন্ধকারের প্রলেপ---
অন্ধকারে ভুলে গেছি---
সত্যের কাঠামোয় মাটিই পড়ছে না, প্রতিমার চক্ষুদান কিসের?
গাইড
মানুষ এখন মানুষের হাত ছেড়ে অসময়ের আঙুল ধরে হাঁটছে,
জেব্রাক্রসিং চৌরাস্তার মোড় ছাড়িয়ে কোথায়---
কোন নিস্তব্ধ সুড়ঙ্গে?
সব জারিজুরি শেষ---
জামার কলার,তর্জনী নামিয়ে একমনে শুনছে
অসময়ের ধারাবিবরণী।
আর চোখের সামনে---
সেই কবেকার ক্যানভাস-
ছবি ঘুঘনির এঁটো শালপাতার মত
উড়ে যাচ্ছে ম্যানহোলের দিকে।
দু'টি কবিতা
দিন
সবার জন্য একটা নির্দিষ্ট দিন থাকে--
বালি খুঁড়ে খুঁড়ে জল তুলে আনার চেষ্টাতেও আসে না,
সেই নির্দিষ্ট দিনের কোন তারিখ নেই--
মাস কিংবা বার-
তোমাকে ঠায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষাও করতে হবে না,
হঠাৎ করেই বাড়ি ফেরার পথে শুনবে-
কালো বালিতে মুড়ি ভাজার মত অনায়াস ফুটেই চলেছে
সেই নির্দিষ্ট দিন।
বিজ্ঞাপন
এখন অতি সন্তর্পনে পা রাখলেও শব্দ হয়,
চারিদিকে সারিবদ্ধ পিঁপড়ের মুখের বিপদ
পড়তে পড়তে বদলে যাচ্ছে আমাদের দিনলিপি।-
তীব্র অনিশ্চিত এক ভয়ের বিজ্ঞাপন লেপ্টে আছে
মিনিট আর ঘন্টার শরীরে-
আমরা এগিয়ে চলেছি মূক বধির বধ্যভূমির দিকে।
অন্ধ
একমুঠো সর্ষের গল্প
কোন একদিন কারো চলে যাওয়ার মুহূর্তে
হিমশীতল নৈঃশব্দ্য জুড়ে মিশে থাকে
কারো অসহায়তা,
ব্যথায় গ'লে গ'লে একসময় নিভে যায় মোম-রাত্রি-
তারপর কারা যেন তাকে শোনায়-
সেই একমুঠো সর্ষের গল্প,
গল্প শুনতে শুনতে দুচোখের আবেগ মুছে উঠে দাঁড়ায় সে-
বোঝে
গল্পের ভাষায় নিহিত জীবনের বীজ।
এভাবেই-
সময়ের আগল খুলে অতর্কিতে কারো চলে যাওয়ার মুহূর্তে
বারে বারে ফিরে আসে, একমুঠো সর্ষের গল্প-
আর সেই গল্প শুনতে শুনতে শুনতে...
অনেকদিন দেখা না হ'লে
অনেকদিন দেখা না হ'লে, না দেখার দুঃখই বাড়ে-
নদী জানে,
চাঁদও জানে আমার এই দুঃখের কথা।
অথচ-
কী এক রঙীনের আড়াল দিয়ে কত অনায়াস
তুমি হেঁটে যাও-
রবীন্দ্রসদন মেলা প্রাঙ্গনে কিংবা
হুসেনের জলনারীর খুব কাছে,
আর আমি-
পাথরের বোবাবৃত্তে বড় বেশি অস্পষ্ট এক একটা দিন
নির্বাসনের প্রলম্বিত ছায়ায় জেগে থাকি একাই।
অনেকদিন দেখা না হ'লে...
এই শহর
সমস্ত যুদ্ধের পর অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা হেসে ওঠে মাঝরাতে কোনও পিয়ানোর সুরে খোলাচুল উড়ে আসে তার বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...