September 06, 2020

সম্পাদকীয়

 প্রকাশিত হল "মহুয়ার দেশ" আত্মপ্রকাশ সংখ্যা।বাইশ জন কবির কবিতা স্থান পেয়েছে এই সংখ্যায়। 

সমকালীন বাংলা কবিতার বিভিন্ন দিকগুলি ফুটে উঠেছে।কবিতাগুলি সমৃদ্ধ হয়েছে কবিদের জায়মান অভিজ্ঞতায়, তারুণ্যের শক্তিতে ভরপুর,অটুট রয়েছে আশাবাদ,কখনও অনেক বাঁকাচোরা,কাঁচা অথচ উদ্দীপনাময়।

সংখ্যাটি পড়ুন সকলে। সাহিত্য চর্চার মধ্য দিয়ে মুক্ত চিন্তার পরিসর বৃদ্ধি পাক আশা রাখি। সুস্থ আলোচনা হোক।আপনাদের মতামত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

সবাই ভালো থাকুন। 

কাহলিল জিব্রানের তিনটি কবিতা

লেবাননের কবি কাহলিল জিব্রান(১৮৮৩-১৯৩১)জন্ম লেবাননে হলেেও বাল্যকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। 
কবির পরিসর শুধু কবিতায় আবদ্ধ থাকেনি, চিত্রকলায় যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন। বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ "দ্য প্রফেট" এবং "ব্রোকেন উইংস"।মূলতঃ রূপকাশ্রয়ী কবিতার জন্য তিনি পরিচিত। 

 অনুবাদক: অভিষেক সৎপথী


জিব্রানের তিনটি কবিতা


স্বপ্নচারী (The sleepwalkers)


যে শহরে আমি জন্মেছিলাম সেখানেই থাকতো এক ভদ্রমহিলা এবং তার কন্যা। তারা ঘুমের মধ্যে চলাফেরা করতো।
একদিন রাতে নৈঃশব্দ্য যখন দুনিয়াকে জড়িয়ে ধরেছে, সেই নারী ও তার মেয়ে হাঁটছে যদিও তারা সুপ্তিমগ্ন।কুয়াশা মোড়া বাগানে তারা মুখোমুখি হলো।

তখন সেই ভদ্রমহিলা জননী বলে উঠলো, "পোড়ারমুখী
শত্তুর তোর মুখে ছাই!
তোর জন্য আমার যৌবন উচ্ছন্নে গেছে
আমার থেকেই তোর যৌবন ভরে গেছে!
পোড়ারমুখী, তোকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে? "

তখন মেয়ে বলে উঠলো, " ছিঃ ঘৃণ্য মহিলা, জঘন্য স্বার্থপর কাঠখোট্টা বুড়ি। তোর জন্যই আমি আমার মুক্তসত্ত্বা হারিয়ে ফেলেছি। তোর বেরঙিন আবছা জীবনের আমি ছায়া মাত্র! আমি তোর প্রতিধ্বনি!তুই কেন মরে গেলি না? "

হঠাৎ সেই মুহূর্তে এক মোরগ ডেকে উঠলো। দুই নারীই ঘুম থেকে জেগে গেল। মা স্নেহ ভরে বললো,"এই তো আমার মিষ্টি মেয়ে। "
মেয়ে কোমল স্বরে বললো, "হুম, মাম্মি। "


কাকতাড়ুয়াটি (The Scarecrow)


কাকতাড়ুয়াকে একদিন বলেছিলাম, "নির্জন মাঠে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিশ্চয় বেশ ক্লান্ত।"
 তার উত্তর ছিল "ভয় দেখানোর আনন্দ অপার। ক্লান্তি কখনো ঘিরে ধরে না আমায়।"
 এক মূহুর্ত পর আমার উপলব্ধি হয়  "এটাই ঠিক,নির্ভেজাল সত্য, এই আনন্দ আমার চেতনায় আলোক প্রাপ্ত।"

 সে জানিয়েছিল আসলে যারা খড় পোহালে ঠাসা তারাই এটা জানে।

 তারপর আমি চলে গিয়েছিলাম, বুঝতে পারছিলাম না সে আসলে আমার প্রশংসা করেছিলো না উপহাস করেছিলো।

 বছরের শেষে  সেই  কাকতাড়ুয়াটি দার্শনিক হয়ে গিয়েছিল।
এবং সেবার যখন তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম আমি দেখেছিলাম দুটো কাক তার টুপিতে বাসা বেঁধেছে।


চোখ (The Eye)


একদিন চোখ বললো, " এইসব উপত্যকা নীল কুয়াশা ঘেরা পাহাড় , সুন্দর নয় কী? "

কান শুনলো, তারপর আরও কিছুক্ষণ কান খাড়া করে বললো, " কোথায় পাহাড়?  আমি তো কিছুই শুনতে পাচ্ছি না!"

তারপর হাত বললো,"আমি খুব চেষ্টা করছি। আমার শিরা উপশিরা কোনো কিছুর স্পর্শ পাচ্ছে না। আমি তো কোনো পাহাড় খুঁজে পাচ্ছি না।"
এবং নাক বললো,"আরে!কোথায় পাহাড়,কিছুই নেই।গন্ধ পাচ্ছি না। "

তখন চোখ অন্যদিকে চলল এবং বাকি  সকলে চোখের দৃষ্টিভ্রম নিয়ে এক চোট হেসে নিলো।তারা মেনে নিলো "চোখের নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে"।

সুব্রত চক্রবর্তী

কবি চিত্তরঞ্জন ভট্টাচার্য্য। 

কাব্যগ্রন্থ  "রাত্রির দিনলিপি"

সাঁঝবাতি প্রকাশন


 রাতের পিছনে আসে দিন। আবার অস্তরাগের পরে কালো আঁধার রাত। এইভাবে রোদ ও রাতের যাপন ধরা থাকে অক্ষর বিন্যাসে। আর যদি কবি হন ঋষি মনের, প্রেমিক ভাবের আর চির নবীন, তাহলে রোদ ও রাতের রঙে তাঁর নির্মোহ আবেগ দিয়ে তিনি রাঙিয়ে দেন দৈনন্দিন জীবনের চাওয়া পাওয়ার দুর্লভ মুহূর্তগুলিকে। সমগ্র জীবন তখন কবিতার অক্ষরে অক্ষরে হয়ে যায় ভুবন ডাঙার মাঠ। ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা কবি তখন দেখতে পান,,,, ভুবনডাঙার মাঠে সেই "বট গাছটার দেহাতী ছায়া / মোড়লের বৌ-এর মতো ঘোমটা টেনে / কোনো এক রবিঠাকুরের জন্যে / রোদটাকে পাহারা দিচ্ছে"... 



আছে চির নবীন কবি, চির প্রেমিক ঋষি কবি চিত্তরঞ্জন ভট্টাচার্য্য তাঁর "রাত্রির দিনলিপি" কাব্যগ্রন্থে প্রথম কবিতাতেই এইভাবে লিখেছেন আলোবেলার কথা। লিখতে ভুলেননি আলো ছায়ার কথাও। কবি এই কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর অমৃতলোকবাসী পিতা মাতাকে। কেননা তাঁর মনে সদা জেগে আছে,

"কুলুঙ্গিতে পড়ে রইল অন্নদামঙ্গল/ আর আমার মায়ের রেখে যাওয়া ধৌত অঙ্গবাস।"


পড়াশোনা এবং কবিতা চর্চা আজও আশি উত্তীর্ণ কবির দিনযাপনের সঙ্গী। প্রকৃত অর্থে তিনি কবিতা সাধক। কবিতাই তাঁর ঘর সংসার। কবিতা তাঁর ঈশ্বর সাধনা। তাই তো অনায়াসে তিনি লিখতে পারেন,,

  " ঈশ্বরও এসে পাশে বসেন/ তিনিও স্মৃতির মধ্যে বাস করেন এখন/এবং ঈশ্বরীর সঙ্গে চলে যাওয়া ব্রহ্মকমল দিনগুলি/ তাঁর এমন একটি প্রিয় বিষয়।"


 কবির ব্যক্তিগত সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবন। তাঁর মধ্যেই তিনি উপলব্ধি করতে পারেন,,, 

"ব্যক্তিগত বনবাস পার হয়ে

দৈবাৎ উঠোনে এসে রেলগাড়ি পেয়ে যায় দূরের ফেরিঘাট।"  


কবি হলেন চির প্রেমিক। চির সবুজ একটি মন চিরস্থায়ী তাঁর অন্তরে।  প্রেম ও প্রকৃতিকে তিনি এক সুতোয় বাঁধতে জানেন। "তোমার সঙ্গে তৈরি করব গোপন খেলাঘর/গান নদী সাঁকো পাখি সাজাব পরপর।" 


তিনি তাঁর মানস প্রতিমার কাছে নিরালায় মুখোমুখি,,, "ডুবে যাবার আগে বলুন না কেমন আছেন/

কেন বলতে পারছেন না-''আপনি যেমন রেখেছেন।''


নদী নারী ও নীরবতা কবির সাধনার অন্যতম বিষয়। নারী তাঁর কাছে এসেছে বিভিন্ন রূপে। নারী চরিত্র তিনি এঁকেছেন গভীর অনুভবে। 

" কুয়াশার কাছে ঋণী ছিল খেয়া নৌকার ক্ষণপ্রভা নারী/ নারীর কাছে কৃতজ্ঞ থাকল চিরকালের আদিত্যপুরুষ।"


 "ঝুমুর" কবিতায় তাঁর নারী ও নদীর চিত্রকল্প আমার মতো আনাড়ি পাঠককেও ভাবায় দুদণ্ড। "দেখি বুকের গভীরে নারী চিত্রবহ নদী হয়ে আছে।"


জীবনানন্দ দাশকে স্মরণে রেখে কবি তাঁর কাব্য প্রতিমার জন্যে মনোবেদনার কথা লেখেন, ইলা ও নদীর কথা বলেন। "ইলার কাছেই কবি শব্দ আর কোলাহলের তফাৎ শিখেছেন.... ইলা চলে গেছে পশ্চিম বাহিনী কোন নদীর কাছে।/ কার হাতের উপর হাত রেখে কবি এখন/ দুঃখহরণ শব্দগুলিকে অমৃত যন্ত্রণায়

 নিবেদন করবেন।"


নারী তাঁর কাছে পরম ভরসা আর বিশ্বাসের আশ্রয়স্থল। আমি আমার মতো করে খুঁজে পেয়েছি কবির সেই লিপিমালা।

"কথা ছিল ঝড় ঝাপটা সামলে দেবে মৌরীফুলের সারি/ শ্রাবণ এলে ধান পুঁতবে বৃষ্টিধোয়া রাজেশ্বরী নারী।"


" সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে দেখা গেল পাহাড় গেছে বনে/ ভাঙা ঘরে ফিরে এসে পুরুষ দেখে নদীও নির্বাসনে।"


"নদী হল সন্ন্যাসিনী /পাহাড় হল ফকির/ শুকনো ডাঙায় ঘর ভেঙে যায়/পর্যটক কবির।"


 তিনি জানেন প্রেম চলে গেলে, নারী চলে গেলে পুরুষ জীবনে শূন্যতা আসে। সেই শূন্যতার ছবি তিনি শূন্যতার রঙে এঁকেছেন।

"এমন করে চলে গেলে তুমি শূন্যতাও শূন্য হয়ে যাবে।"


তিনি তাঁর অনুভব ক্ষমতার জোরে নারী মনটিকেও অনুভবে আনেন। "আয় ঠাকুরঝি দোর খুলে দি আঁচল খুলে রাখ।/ জলের বসন পর গো সখী আঁধার গায়ে মাখ।"

ঘর গেরস্থালি আর ঘরের মানুষজন তাঁর কবিতায় প্রাণ পায় এভাবেই।

"ছেলে কোলে মায়েদের ভগ্ন কণ্ঠস্বর/ অন্ধকারে চেয়ে আছে ঈশ্বরের অসুস্থ সংবাদে।"


"এখন কথাবার্তা সব বন্ধ/ জানলায় আর কোনো রূপচর্চা নেই... আমাদের এখন ক্লান্তির কাল।" 


তিনি আবার কালে উত্তীর্ণ করেছেন তাঁর মন ও মনন শিল্পকে। তিনি শুধু প্রেমিক নন, নদী নারী নীরবতার পরেও তিনি পথ খুঁজেন নিজের জন্যে, পথ খুঁজে দেন আমাদের জন্যে। এটাই তাঁর সৃষ্টির সার্থকতা।

"উদাসীন চোখে কোনো বিকার থাকে না

দার্শনিক হয়ে যাওয়া বড়ই সহজ।"


" চল আমরা যাই সাঁকো পেরিয়ে অজ্ঞাতবাসের ঠিকানায় ,,,দিনের আলো থাকতে থাকতে যে যার প্রিয় জিনিসগুলি/ নারী প্রেম বিবাহের মন্ত্র সন্তানের স্বপ্ন এবং মায়ের ডাক/ নদীর বুকের ভাষা/ পার্শ্ববর্তী শমীবৃক্ষে তুলে রেখে দিয়ে যাই।"


"শিউলিগন্ধে শোকপ্রস্তাব মনের মধ্যে আসুক/ শরীর জুড়ে উথাল পাতাল নীরবতা ভাসুক।


"এক তরুণ কবি এবং মৈত্রেয়ী" "মধ্যরাতে বধ্যভূমি" "চায়ের ভাঁড় এবং পায়ের চটি" মুক্ত গদ্য কিম্বা বিশুদ্ধ কবিতায় সেই উচ্চারণ ভিন্ন রূপ ও রসে আমাকে বিমোহিত করেছে।

কবির চিত্রকল্প , অনুভব ক্ষমতা, দর্শন বোধ আমাকে মুগ্ধ করে। বিস্মিত করে।  ইতিহাস, পুরাণ তাঁর গভীর জ্ঞান ও প্রকাশে অন্য মাত্রা পেয়েছে তাঁর কবিতায়,,,

"পায়ে ফণী মনসার ঝোপ নিয়ে শুধু এক তালগাছ দাঁড়িয়ে একটি টিলায়/ যেন আটলান্টিকে নোঙর ফেলা সাও গ্যাব্রিয়েল।" "ক্লিয়োপেট্রা নাটকে নায়িকার ভূমিকায় যোগ্য অভিনেত্রী না পাওয়ায় স্বয়ং ক্লিয়োপেট্রাই অবতীর্ণ- তাঁর কোন মেক আপ লাগছে না।"


তাঁর প্রতিটি কবিতার প্রতিটি লাইন এক একটি পূর্ণাঙ্গ কবিতা। প্রতিটি চিত্রকল্প জীবন্ত, প্রাণময়।

"চর্যাপদের হরিণীদের মেঘে ঢাকা ঘাস বিলি হয়ে যায় প্রকাশ্য দোকানে,,, মহাজনী খাতার লেনদেন কালান্তরে বদলে যায় কালিন্দী ও গিরিগোবর্ধন।"


"শঙ্খ বণিকের পালা" কবিতায় তিনি লিখেছেন অভিনব অনুভূতি। "ভোরের আলোয় পুষ্করিণীর জলে ভেসে উঠবে শাঁখা পরা হাত/ হাতে লেগে থাকবে কনকচূড়া ধানের গন্ধ আর আসতো ধাতুর লাবণ্য।"


 নিরাশায় তাঁর বাস নয়। তাঁর নির্মাণে আমরা আশার আলো, বাঁচার আলো ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পাই।

"সময় হলে পৃথিবীতে গ্রহণমুক্তির আলো এসে পৌঁছাবে/ ততদিন কেউ না কেউ থাকবে জেগে থাকবে।"


"অসুখ বিসুখ হলে সাদা কাগজে/সাম্রাজ্যের মানচিত্র এঁকে নিও/ কিন্তু সীমানা নির্দেশ করো না।"


 অবশেষে এই প্রেমিক কবি কতো অক্লেশে লিখতে পারেন ,,,

"আমার নিজের বলতে আছে বৃষ্টির দিনগুলি/আর উদাসীন শরীরটুকু/ অন্য যা ছিল তা দখল করে নিয়ে গেছে/ অন্য এক হরিণী।"

শ্রদ্ধায় নত হই, মুগ্ধতায় বিস্মিত হই, আর দিনের সমস্ত না পাওয়া ভুলে যাই কবির এই কাব্যগ্রন্থের লাইনগুলি ছুঁয়ে।


অভিষেক সৎপথী

 নিমন্ত্রণ লিপি


ড্রাগনফলের পত্রকান্ডের দীর্ঘ লোমের মতো

তোমার এলোমেলো চুলের ফাঁকফোকরে

আকাশ দেখি

চোখে চোখ হারাই

অনেককাল কোনো কুটুম্বতা নেই 

না হলুদ ছোঁয়ানো নিমন্ত্রণলিপি। 


অথচ দিন কতক আগে

জানালা দিয়ে দেখেছি

দু আঙুলের মতো ফাঁকা ফাঁকা দু মানুষের

দাঁড়িয়ে থাকা

বটগাছটির মতো দীর্ঘায়ু হয়ে 

দাঁড়িয়ে ছিল টিনের শেডে

নিমন্ত্রণ লিপি আর কয়েকটি সুপুরি হাতে

অথচ দরজা খুলে তাকে আমন্ত্রণ জানাইনি।


মুহাম্মদ আকমাল হোসেন

দু'টি কবিতা


শূন্যতা -১

বুকের ভিতর ময়ূর পেখম,জল যুবতী নদী।

                                    ইচ্ছে স্রোত।


ডাক টিকিট মারা দিন 

পুরে দি সাদা স্মৃতির খামে।


 সত্তার নতুন কলির ঠিকানায়।

ছোবেনা তুমি গ্রহনের আগে - পরে

বিষ অ্যানথ্রাক্স! 


ইচ্ছে গুলো  উজান।বেহুলার সাথে,

মৃত পোস্ট অফিসের গান করে।


শূন্যতা ২


পথ পিষে মাখিয়ে নিচ্ছি পায়ে,

আয়ুর্বেদিক বিজ্ঞাপনে মিশে দুই বেলা।


চেনা হাতের বিশ্বাসে ডুবে মরি।

দিতে পারো, বিষের পেয়ালা


পোড়ো বাড়ির বিশ্বাস নিয়ে দঁড়িয়ে আছি 

 শূন্য পথে একলা...


চিত্তরঞ্জন গিরি

 আমার বাংলা ভাষা


তুমি যদি আকাশ হও। আমায় তোমার বর্ণমালা করে দিও।

আমি বর্ণমালা হয়ে ,নক্ষত্রে নক্ষত্রে -তোমায় আমি সাজাবো ,দিগন্ত জুড়ে, তোমার বিছানো আঁচলে ।


তুমি যদি সমুদ্র হও। আমাকে তোমার ঢেউ করে দিও।

আমি ঢেউ হয়ে উজান স্রোতে পাড়ের সাথে মিতালী করবো। কবিতার ছন্দ উগরে দিয়ে বিরহের কাব্য কথা বলব।

তুমি যদি নদী হও। আমায় তোমার পালতোলা নৌকা  করে দিও।

 আমি নৌকা হয়ে ভাটিয়ালী গান শোনাবো। দাঁড় বেয়ে তরঙ্গ লহরী এনে, উতল হাওয়ায় উদ্যত কন্ঠে, সুরধ্বনি ছড়িয়ে দেব।

তুমি যদি বাঁশি হও। আমায় তার সুর করে দিও।

আমি সুর হয়ে কুঞ্জে অলি গুঞ্জরিয়ার বাউল মনে প্রেম কাব্য ছড়িয়ে দেব। সোহাগ নুপুরে নেচে উঠবে কত ময়ূর ময়ূরীর পেখম। দোদুল দোলায় কপোত-কপোতি তরুলতায় মনের কথা কুড়িয়ে নেব।

তুমি যদি তুলসীতলা হও। আমায় সাঁজের প্রদীপ করে দিও। বাংলা ভাষা বর্ণমালায় অক্ষরে অক্ষরে সাজাবো তোমার সাধের উঠোন। আলতা পরা গৃহবধূর পায়ে পায়ে আমার আত্মায় জাগরিত হবে শত সহস্র স্পন্দন।

তুমি যদি চান্দ্রমা হও ।আমায় তুমি তোমার চন্দ্রকলা  করে দিও। রোশনায় রোশনায় মন্দ্রিত ধারায় মানব ধর্মের সৌহার্দ্য ভাতৃত্ববোধ সকল সত্তায় হৃদয়ে হৃদয়ে এঁকে দেবো।

তুমি যদি আগ্নেওগিরির হও আমাকে  তোমার গরম লাভা বা ম্যাগমা করে দিও। আগুনের উত্তাপে আমি পৌঁছে যাব প্রতিবাদের ভাষায়। পুড়িয়ে মাড়িয়ে মুছে দেবো প্রতিবন্ধকতার জঞ্জাল। হৃদয়ের এই আশ্বাস টুকু থেকে যাক বাংলা মায়ের অমৃত বসুধায়। 

নির্মাল্য মণ্ডল

 দু'টি কবিতা 


অভিমানী সুখ 


এখনও গোধূলি রং আনে

বৃষ্টির পরে সোঁদা গন্ধ,

এখনও মাটির ভাঁড়ে গরম চুমুক,

এখনও অভিমানী রাত গড়ে দ্বন্দ্ব।

এখনও আলোর ভাঁজে আঁধারের সুখ,

এখনও মন কেমনের ঘরে তোমার মুখ।


দূরের জনপদ 


তোমার চোখে তারাদের ভিড়!

তাই ওদিকে আর বিশেষ যাই না... 

ইদানীং খুব বেশি বলতেও ইচ্ছা হয় না আমার।

ধরে নিই, আমি 'আ' বলতেই তুমি বুঝে নেবে...

আবদুস সালাম

 দু'টি কবিতা


গর্জন

স্বপ্নের বারান্দায় গর্জন ডানা মেলেছে

বিষন্ন জলে মুখ ধুয়ে নিচ্ছে নষ্ট সভ‍্যতা
মনুষ্যত্বহীন অবহেলায় রাত নেমে আসে চৈতন্যের বারান্দায় কুচক্রী সংবাদ রাষ্ট্র হয় 
ভেঙে পড়ছে দৈবের ঘর

রাত্রি নামে বিষাদের আঙিনায়
ধর্মের দোকানে বিক্রি হয় নেশাতুর অভিশাপ
দগ্ধ প্রজাপতি কেড়ে নিচ্ছে সুস্থ সময়

মোহজল  গড়িয়ে পড়ে পিপাসার সমুদ্রে
বিড়ম্বনার চোখে জ্বলে ওঠে নিষিদ্ধ বিতর্ক। 


বিবর্ণ পাঠশালা

অস্বস্তিকর প্রস্তাবে প্রবন্ধের পৃষ্ঠাগুলো সংকুচিত হয়
নৈরাত্মার ঢেউ লাগে বিবর্ণ পাঠশালায়
পড়ুয়াহীন পাঠশালায় অবিন‍্যস্ত পাঠক্রম
বিশ্বাস এখানে  নিহত হয় রোজ

গোপন ঈর্ষায় জেগে ওঠে চিত্রশালা
সংসারের বিন‍্যস্ত প্রহরে খেলা করে মাতাল অস্তিত্ব
ঝাপটা খায় বৃদ্ধ বিশ্বাস
খুঁটি উপড়ে যায়
অর্ধ দগ্ধ ভোর উঁকি মারে চৈতন্যের বাগানে

রুদ্ধ ঠোঁটে থাবা বসায় প্রণয় কথা
গুমরে মরে উৎসব পৃথিবীর দলীয় অহংকার
 তবুও দুঃখী চাঁদ বিষন্ন আলো জ্বেলে নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে

সুজিত রেজ

এত ভালোবাসা পেলে


এত ভালোবাসা পেলে কুয়াশার ছুটি

তুঙ্গনাথের শিরে রোদের খুনসুটি ।


এত ভালোবাসা পেলে নদীর এপার

নিশ্বাস ছাড়িয়া কহে জলের নেই আকার।


এত ভালোবাসা পেলে নৌকো হতে ইচ্ছে করে

অনায়াস ভাসা যায় ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের ভিতরে।


এত ভালোবাসা পেলে বেঁচে থাকা যায়

নুড়িরা যেমন থাকে অলকানন্দায় ।


এত ভালোবাসা পেলে খেজুরপাতায়

ভাঙা চাঁদ নেমে এসে জোছনা বিলায়।


শুভজিৎ দে

তোমায় ভুলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি


ধূসর রাতের বায়বীয়তা আমায় টানে...

পৃথিবীর বক্ষ থেকে যৌবন চিল মোহনীয় সন্ধ্যা ছিনিয়ে নিয়ে যায়

কালো ডানা দিয়ে টেনে আনে কালরাত্রি

দিকবিদিকের জ্বলে ওঠা রং

বেরঙের আলোয়-

ভেসে ওঠে তোমার নয়নাভিরাম নয়নমণি।

অমাবস্যার অন্ধকার তোমার ভুরু চাঁদের কলঙ্ক হয়ে ওঠে-

মধ্যরাতের বিদ্যুতের ঝলকানিতে ভেসে ওঠে তোমার চাঁদ মুখ।


এখনও প্রতিটা ক্ষণই মায়াবী হয়

নিদ্রাহীন প্রতি রাতে ছুঁয়ে যায় তোমার অনুভব

বিব্রত নেশায় ভাসে তোমার কন্ঠ

তুমি ছেড়ে গেছে অনেকদিন

তবুও প্রাক্তনী...

তোমায় ভুলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।


কথিকা বসু

 দাগ


বিচ্ছেদ সম্মান করে রুমালে মোছা রক্তের

দাগটাকে,

রুমালটা পাওয়া গেছিল কংক্রিট যেখানে মিছে মিছে ভাগ করেছিল রাস্তাটাকে;

যে রাস্তা দিয়ে,ছদ্মবেশে আজও বম্বের সুপারস্টার,স্কুটার চালিয়ে নিয়ে যান।


এখন প্রশ্ন হলো, বিচ্ছেদ তো হল?

কিন্তু রুমালের রক্তের দাগটার কি হবে?

সে তো প্রাক্তন নয়,

সময়ের শ্যাওলাধরা তরবারীর ফ্রেমে বন্দী নয়,

বেহাগ রাগ কিম্বা বসন্তের খেয়ালী ফাগ সবই তার কাছে ফিকে।


তাই সে চিরঅমর, যৌবনের ঔজ্জ্বল্যে উজ্জ্বল আজীবন।

দাগটা থাকবে, শেষ পর্যন্ত থাকবে,

ভোরের কুয়াশাঘেরা মাঠ পেরিয়ে,

কলমি শাকের ক্ষেত এড়িয়ে,


দ্বিখন্ডিত শরীরের জীর্ণতা এড়িয়ে,

স্তব্ধতার চূড়ান্ত বিশ্রাম পেরিয়ে,


ইতিহাসের ক্রুদ্ধ তরবারি পেরিয়ে,

নীলকন্ঠের বিষ দাঁত এড়িয়ে


দাগটা থাকবে, শেষ পর্যন্ত থাকবে।।


শৈলেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়

 সংবেদ্য


শ্মশানের এক চিলতে মাটিতে পা রেখেই,

চেতনা এসেছিল -অচেতন স্তব্ধ  শরীরে !

সামনের উষ্ণ -বৈদ্যুতিক ঘরে-

আমার বন্ধু জ্বলছিল, দাউ দাউ করে।

ঘন্টা বাজলেই, অস্থিপোড়া একমুঠো ছাই নিয়ে,

নদীর জলে মিশিয়ে, নিশ্চিন্তে, নির্ঝঞ্ঝাট হয়ে-

ওরা বাড়ি ফিরে ,সম্পর্কের হলুদ রঙ মুছে দেবে!

গনগনে আগুনে, এখনই আমার দহন শুরু হবে !

এখন চারিদিকে হাজারো অশনি সংকেত :

চোখ রাঙিয়ে জিজ্ঞাসা করে, অজস্র কৈফিয়েৎ,

অন্যায় আর পাপের পাল্লা ভরেছে দু'বেলা।

রসনায় অসংযমিত জীবনের সারাবেলা !

এরপর বিভীষিকাময় ,অজানা -অন্ধকারে;

প্রায়শ্চিত্তের আফশোষ রয়ে গেল -শেষ প্রহরে!

অর্পিতা ঘোষ

জলফড়িং


আমার চারপাশের কথা, প্রেম, কবিতারা পুড়তে শুরু করেছে অদৃশ্য হুতাশনে,ধ্বংসের লেলিহান শিখা স্পর্শ করেছে অবহেলার সুউচ্চ পর্বত!

আমি সেই আগুনের লাভা ছুঁয়েছি,

তপ্ত আগুনের বহ্নিশিখায় পুড়ে ছাই হয়েছি বারবার,বহুবার;


তবুও তাকে ছোঁয়ার অদম্য ইচ্ছে প্রশমিত করতে পারিনি!

মৃত্যু আসন্ন জেনেও ওতে ঝাঁপ দিয়ে ঝলসে গেছি সহজিয়া নিয়মে,

ভালোবাসার জ্বালায় নিজেকে জড়িয়ে তাকে আগলে রাখতে চেয়েছি কোনো এক দৈব বলে;

আর সে শুধুই কলঙ্কিত করেছে আমার উন্মুক্ত বনানী ,

ক্ষত বিক্ষত করেছে আমার নরম শরীর,

চোখ,নাখ, ঠোঁটে এঁকে দিয়েছে অপ্রাপ্তির বলিরেখা;

গল্পকথার মতোই অসম্পূর্ণ গল্প হয়ে রয়ে গেছে আমার প্রেম!

ভালোবাসার বহ্নিশিখায় পুড়ে যাওয়া এক জলফড়িং আমি,

নবজন্মের আশায় তপস্যা করে চলেছি দেবতার পদযুগলে |


পরমাত্মার বরে শতবরষ পরে আমি আবার ও জন্ম নেবো,

পুনর্জন্ম নেবো ধ্বংস ছুঁতে,

ক্ষতর লেলিহান শিখায় ছিন্নভিন্ন হওয়া বুক আবার ও জেগে উঠবে তিস্তার চরে ফিনিক্সের ন্যায়;

আবার ও ভালোবাসার আগুনে মরণ ঝাঁপ দিয়ে বুনে দেবে রূপকথার গল্প | 


ঋভু চট্টোপাধ্যায়

 বুলেটিন                                               


একপা এগোনোর আগে যদি অঙ্ক কষতে হয়,

বুলেটিন প্রকাশের আগে যদি চাপা দেওয়ার

প্রক্রিয়াকরণ চলে, আর প্রতিটা মুহূর্তে তলানিতে

পৌঁছে যায় শ্বাস বায়ু, যদি কতগুলো পুতুল শূন্যে

উঠে বেলুনের চোরাবালি খোঁজে, আর একটা

এপিক নম্বর দেশের দাড়ি পোড়ানোর গল্প ছড়িয়ে

সমাজ মাধ্যমে পুরস্কারের আশা করে, তখন চুপ বলে

ডোবা ছাড়া উপায় থাকে না।

আসলে প্রতিটা পাকস্থলি খাবারের জন্যেই বাঁচে।

রবীন বসু

 পরাজিত নও


তুমি জল ছুঁয়ে বসে ছিলে, স্পর্শে যেন লেগে আছে হাত

সাফল্য তোমাকে ছোঁয়,তবু অন্ধকার জেগে থাকা পাখি

সুমসৃণ ষড়যন্ত্র, গুপ্ত নীল জ্যোৎস্না গায়ে মাখে রাত

তারারা তোমাকে ডাকে আর সে স্বপ্নছোঁয়া সরল আঁখি। 


শূন্য থেকে শুরু করে এক সুদূরের উড়ান ভাসাও… 

তাই ওরা ডানা ভাঙে, হিংস্র নখের আঁচড় গায়ে খাও। 

শিরায় শিরায় শুধু বহে যায় বিষণ্ণ বিষাদ বিষ 

তোমাকে আহত করে ঠিক যেন অসহায় অনিমিষ। 


মনের গভীরে তবু জ্বলে ধিকি ধিকি তুষের আগুন

কেমনে নেভাবে তুমি তীক্ষ্ণ অমোঘের জ্বলন্ত উনুন। 

দিন নেই রাত্রি নেই তবু এই অসহ দহন জ্বালা

তোমাকে একা করে যেমন শত্রুদের তাচ্ছিল্য-শলাকা! 


তাই আজ স্থির আছো দেখি, রাত্রির আকাশ বড় শান্ত

লড়াই তো শেষ হল এবার, তুমি নও পরাজিত সুশান্ত! 

নিজামুদ্দিন মন্ডল

 জলছবি


আমি খুঁজি তোমায়

এই ধুলিকণার প্রতিটি কণায়

বাতাসে বাতাসে

           শীতের আকাশে


তুমি আমায় দেখে মুখ নত করো

কথা শুরু করেই শেষ করো

অভিমান হানো..

জীবনের প্রতিটা পৃষ্ঠায় দাগ দাও,ছবি আঁকো

আবার মুছে দাও

নতুন রং দাও

জলছবি আঁকো। 

পার্থ সারথি গোস্বামী

 আবার সেই দিনের শেষে


বেশ বেহায়া একলা বিকেল ।

বিকেল কেন - রাতেও পারিস

একলা পাতা গণিত খাতায়

পারলে দুটো মিথ্যে দিস ।।


জানি তুই দিব্যি আছিস ।

দিব্যি ভাবিস - দিব্যি হাসিস

দুষ্টু হাসির কিপটেমি তে -

চোখ থেকে মন পুড়িয়ে দিস ।।


তবুও কি সব পোড়ে হায় ।

দিব্যি কাঁদায় - দিব্যি ভাবায়

সাবেক দিনের ভাবনাগুলোর

মেঘ দেখলেই পেখম গজায় ।।


শুধুই কি আর পেখম গজায় ।

উড়তে শেখায় - ঝাপট ডানায়

একটু আধটু ভেজার নেশায়

যোগফল বাড়ে ঋণের খাতায় ।।


তবে সবটাই কি কেবল যোগ ।

আছে ভোগ - আছে বিয়োগ

হাতের এক জুড়তে গিয়ে

দু ঘর বাড়ে ভোলার রোগ ।।


দুই ও কবে তিন হয়ে যায় ।

চলতে শেখায় - বলতে বলায়

আবার সেই দিনের শেষে 

বিকেলে এলে তোকেই ভাবায় ।।


সুব্রত চক্রবর্তী

 যে পথ আমার


ওই পথটা   আমার আবাহন 

এই পথটা   তোমায় দিচ্ছি আমি। 

ওই পথটা   ধুলায় ধুলায় ধূসর

এই পথটা   সুখের অন্তর্যামী। 

ওই পথটা   অকুস্থলের নদী 

এই পথটা ‌‌‌  চন্দ্রমুখী আলো।

ওই পথটা   নষ্ট গাঁয়ের বধূ 

এই পথটা   সহজ সরল ভালো।

ওই পথটা   কালো বিড়াল কাটে 

এই পথটা   শান্তিজলে স্নান।

ওই পথটা   পাপ ও নরক চেনে 

এই পথটা   চেনা স্বর্গধাম।

ওই পথটা   পায়ের প্রথম ছাপ 

এই পথটা   কলম্বাসের দাস।

ওই পথটা   ঝড় ঝাপটা বুকে

এই পথটা   কুশল ঘরে বাস।

ওই পথটা   আমারই থাক ভাঙন নদীর দেশ

এই পথটা  বাঁকের অভাব শুরুর আগেই শেষ।


সুকুমার কর

 মা মাটি মানুষ 


              (১)

মাটি থেকে জন্ম নিই 

   মাটি আমার মা 

মা আমার মানুষই বটে 

   নয় মাটির প্রতিমা 


                (২) 

মাটির কথা বলতে গেলে 

      মা এসে যায় আগে 

   মাটির বুকে গাছেরই ভ্রুন 

       মাতৃস্বত্বা জাগে 


                 (৩) 

মাটি দিয়ে মূর্তি বানাই 

        হৃদয় দিয়ে প্রাণ 

    মাটির বুকে জলের ধারা 

        মানুষই ভগবান 

তুলসীদাস ভট্টাচার্য

 সদর দরজা 


একটা হেলে সাপ বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে 

জঙ্গলের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে 

আর জলধোড়া পচা পাঁকে মাথা ঢুকিয়ে জল খোঁজে

মজে যাওয়া হেলেঞ্চাভর্তি পুকুরে জলচিতি 

বিষ ঢেলে পেরিয়ে যায় হাইওয়ে 


অ্যান্টিবায়োটিকে দুর্বল শরীরগুলো 

বিড়্ বিড়্ করতে করতে ছায়া খোঁজে 

কাশতে কাশতে অতিক্রম করে 

সংক্রামিত ফুসফুসের সদর দরজা ।

সব্যসাচী পণ্ডা

 তারাদের কথা


আসলে এসব তারাদের কথা।

আমি যদিও শুনিনি,তবে ঝিণ্টি শুনেছে।

সে এই কদিন ধরে ছাদে  অথবা স্কুলের মাঠে গিয়ে দাঁড়ায়

তারপর তারাদের কথা শুনে।

ঋতা বলছিল এসব ওর পাগলামি।


একদিন রাতে আমাকেও সে নিয়ে গেল ছাদে।

কিছু মানুষ তখনও বড় রাস্তায় চুপ করে ঘুরছে।

আসলে এরা সব খুঁটে খায় 

আর সব মেনে নেয় ভাগ্যের দোষ...

ঝিণ্টি একমনে তারাদের কথা শুনছিল।

আমিও চেষ্টা করলাম কান পেতে আর মন পেতে।


সেই রাত থেকে আমরা দুজন অর্থাৎ আমি আর ঝিণ্টি

ক্রমশ মেরুদণ্ড খুঁজছি

প্রতিবাদী হব বলে,

কেননা ভাগ্যদোষ মেনে নিয়ে চুপচাপ খুঁটে খেতে

আমাদের আর ভালো লাগছে না।

সৌমাল্য গরাই

 দেখা ও অদেখা


থাকা আর না-থাকার মাঝে

আকার  থাকে না যার, তাকেই রেখেছি 

শাঁখা ও সাকার মেনে


আসলে যে নেই সেও থাকে

স্তব্ধে ও স্পন্দনে

যতি চিহ্ন,শব্দ রেখা সবকিছু মুহূর্তে

 মিলিয়ে

যে-রকম কালো তারাদুটি

চোখের ভিতর দেশে অন্ধকার দিয়ে

কী নিপুণ আলো জ্বেলে রাখে

অর্ঘ্যকমল পাত্র

 দু'টি কবিতা


হিসেবানুযায়ী


মাকড়সা দেখে ভয় পেয়ে যায়

যেসব মেয়েরা

তারা আসলে চায়,তাদের 

বাবা-স্বামী-প্রেমিকরা ক্রমশ

এস্কেলেটর বেয়ে উঠুক...


আর সে নিজে বসে থাকুক

মেঘের ভিতরে

মাকড়সা দেখে ভয় পেয়ে যায় 

যেসব মেয়েরা 

তারা খুব ভালোভাবেই দেখেছে

নাছোড় জালে, কীভাবে আটকে পড়ে

পতঙ্গের ভ্রম

যারা আর কখনোই উড়তে পারে না...



 মেগা সিরিয়াল


রাত বাড়লে, ক্রমশই

আরও অন্ধকার হয়ে ওঠে—

মেগাসিরিয়ালগুলো

দেখি— 

রাত বাড়তেই, এক-একটি চরিত্র 

দ্বিধাহীনভাবে শুয়ে পড়ে

ঘুমিয়ে পড়ে...

এবং সেসব দেখতে দেখতেই

ঘুমোনো হয় না আমার...



অনিমেষ প্রাচ্য

 

দু'টি কবিতা


কনডেম-সেলে দাঁড়িয়ে,জেব্রাক্রসিংয়ের 


কনডেম-সেলে দাঁড়িয়ে,মৃত্যু নির্দেশিত পথে জোনাকি হাঁটে; শানিত ছুরির ভেতর,হৃদয় উন্মিলিত কোরে,আফিমের আকাঙ্ক্ষায় ব্যর্থ হয়,আমাদের শতাব্দির দিকে ছুটে চলা প্রেম—মহিরূহ

বেথোভেন কিংবা মায়াস্ট্রো

বেথেলহেম অথবা ব্রোথেল, পরিশিষ্ট হয়, 

সব বিপরীত দৃশ্যই এক—

এসব পবিত্র স্থানে আমাদের নির্লিপ্ত শয্যা হবে;

একই প্রেম

একই দ্রোহ—একই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে, নির্দ্বিধায় হেঁটে চলা মাকড়সা, আরও ক্রমাগত ডুবে থাকে,ভরা জ্যোৎস্নার মজলিসে

চুমুর দৈর্ঘতায় য্যানো জেব্রাক্রসিংয়ের পথ 

ফরাসি মদের ভেতর — উৎসর্গিত মৃত ঠোঁট, কখনও কোনো নগ্ন বালিকার হতে পারে।

(১৫-ভাদ্র, ১৪২৭) 


রাজকীয় জ্যোতিষ্ক 


কোনো এক সাইকোঅ্যানালিসিসের ভেতর থেকে, রাজকীয় জ্যোতিষ্কের বিক্ষিপ্ত শব্দগুলি, আমারে প্রবল হত্যা করে।

প্রত্যাবর্তিত এই আকস্মিক ব্যথা, তোমাকে শূন্যতায় উড়িয়ে নেয়া মেঘ— জ্বলন্ত রক্ত হতে জন্ম নেয়া ঘাতক প্রজাপতি; হয়তো আঙিনার পথে তোমার কান্না বহমান,  আমি ছুঁতে পারি-না মৌনতা, অন্ধতাগুলি; আর অহম প্রিয়তমা। জারুল বনে লুকিয়ে আছে অপর্যাপ্ত মহামান্য ঈশ্বর;


সেই দ্রোহ অঙ্কনগুলি, মনে কোরে, 

মরে যাওয়া সহজ।

কিংবা ধরো,- কেউই আর বেঁচে নেই বাতাসের অক্ষরে।

(১৪-ভাদ্র, ১৪২৭)

গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...