September 06, 2020

কাহলিল জিব্রানের তিনটি কবিতা

লেবাননের কবি কাহলিল জিব্রান(১৮৮৩-১৯৩১)জন্ম লেবাননে হলেেও বাল্যকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। 
কবির পরিসর শুধু কবিতায় আবদ্ধ থাকেনি, চিত্রকলায় যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন। বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ "দ্য প্রফেট" এবং "ব্রোকেন উইংস"।মূলতঃ রূপকাশ্রয়ী কবিতার জন্য তিনি পরিচিত। 

 অনুবাদক: অভিষেক সৎপথী


জিব্রানের তিনটি কবিতা


স্বপ্নচারী (The sleepwalkers)


যে শহরে আমি জন্মেছিলাম সেখানেই থাকতো এক ভদ্রমহিলা এবং তার কন্যা। তারা ঘুমের মধ্যে চলাফেরা করতো।
একদিন রাতে নৈঃশব্দ্য যখন দুনিয়াকে জড়িয়ে ধরেছে, সেই নারী ও তার মেয়ে হাঁটছে যদিও তারা সুপ্তিমগ্ন।কুয়াশা মোড়া বাগানে তারা মুখোমুখি হলো।

তখন সেই ভদ্রমহিলা জননী বলে উঠলো, "পোড়ারমুখী
শত্তুর তোর মুখে ছাই!
তোর জন্য আমার যৌবন উচ্ছন্নে গেছে
আমার থেকেই তোর যৌবন ভরে গেছে!
পোড়ারমুখী, তোকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে? "

তখন মেয়ে বলে উঠলো, " ছিঃ ঘৃণ্য মহিলা, জঘন্য স্বার্থপর কাঠখোট্টা বুড়ি। তোর জন্যই আমি আমার মুক্তসত্ত্বা হারিয়ে ফেলেছি। তোর বেরঙিন আবছা জীবনের আমি ছায়া মাত্র! আমি তোর প্রতিধ্বনি!তুই কেন মরে গেলি না? "

হঠাৎ সেই মুহূর্তে এক মোরগ ডেকে উঠলো। দুই নারীই ঘুম থেকে জেগে গেল। মা স্নেহ ভরে বললো,"এই তো আমার মিষ্টি মেয়ে। "
মেয়ে কোমল স্বরে বললো, "হুম, মাম্মি। "


কাকতাড়ুয়াটি (The Scarecrow)


কাকতাড়ুয়াকে একদিন বলেছিলাম, "নির্জন মাঠে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিশ্চয় বেশ ক্লান্ত।"
 তার উত্তর ছিল "ভয় দেখানোর আনন্দ অপার। ক্লান্তি কখনো ঘিরে ধরে না আমায়।"
 এক মূহুর্ত পর আমার উপলব্ধি হয়  "এটাই ঠিক,নির্ভেজাল সত্য, এই আনন্দ আমার চেতনায় আলোক প্রাপ্ত।"

 সে জানিয়েছিল আসলে যারা খড় পোহালে ঠাসা তারাই এটা জানে।

 তারপর আমি চলে গিয়েছিলাম, বুঝতে পারছিলাম না সে আসলে আমার প্রশংসা করেছিলো না উপহাস করেছিলো।

 বছরের শেষে  সেই  কাকতাড়ুয়াটি দার্শনিক হয়ে গিয়েছিল।
এবং সেবার যখন তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম আমি দেখেছিলাম দুটো কাক তার টুপিতে বাসা বেঁধেছে।


চোখ (The Eye)


একদিন চোখ বললো, " এইসব উপত্যকা নীল কুয়াশা ঘেরা পাহাড় , সুন্দর নয় কী? "

কান শুনলো, তারপর আরও কিছুক্ষণ কান খাড়া করে বললো, " কোথায় পাহাড়?  আমি তো কিছুই শুনতে পাচ্ছি না!"

তারপর হাত বললো,"আমি খুব চেষ্টা করছি। আমার শিরা উপশিরা কোনো কিছুর স্পর্শ পাচ্ছে না। আমি তো কোনো পাহাড় খুঁজে পাচ্ছি না।"
এবং নাক বললো,"আরে!কোথায় পাহাড়,কিছুই নেই।গন্ধ পাচ্ছি না। "

তখন চোখ অন্যদিকে চলল এবং বাকি  সকলে চোখের দৃষ্টিভ্রম নিয়ে এক চোট হেসে নিলো।তারা মেনে নিলো "চোখের নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে"।

No comments:

Post a Comment

গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...