June 26, 2022

তৈমুর খান

 দুটি কবিতা 


১.
নিজেকে দেখেছি এবার 



অসুখ থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছি দ্রুত মোটরগুলি চলে যাচ্ছে পতাকা নেই আমার
হে মানুষ, পতাকা নেই !

ঘৃণার জলে ভিজতে ভিজতে একটাও চালা নেই
সাইকেল নির্ভর জীবন
খণ্ডেৎ ত বিহীন বলে
উৎসব এল না আর



দূরের নকশা দেখে দেখে
কত পদ্ম ফুটল
চৈতন্য জাগল কলরবে
হাওয়ায় উড়ল সিংহাসন



একটা ভ্রমরের পেছনে পেছনে মধু সংগ্রহের উড়ান শুধু আর কিছু নয় 



সংশয়


সংশয় একজন বালক বলে
ওকেও মাঝে মাঝে ভিরু মনে হয় 


ব্রিজের উপর দিয়ে আমাদের গাড়িটি ছুটছে

ব্রিজও ছুটছে নাতো ?


আমরা ঝুলে আছি অনন্ত গভীরে

এখানে ভাঙা আকাশের টুকরো আর নিসর্গের নাভি স্বয়ংক্রিয় মায়াবীনিশীথ পড়ে আছে 



যেতে যেতে ভাবনারা নড়ে উঠছে 

ক্রমশ যেতে যেতে কেঁপে উঠছে আলো 

সংশয় কিছুই বোঝে না ——


 ঝুলন্ত মহুল বনেও নিশ্চুপ কোকিল 

টুপটাপ ঝরছে তার শৈল্পিক হৃদয়...




অমিত চক্রবর্তী

 আধঘন্টা নারীর আলস্যে


           “যে সব খবর নিয়ে সেবকেরা উৎসাহে অধীর,

              আধঘন্টা নারীর আলস্যে তার ঢের বেশি পাবে” – বুদ্ধদেব বসু

 

আধঘন্টার আলাপ, আলস্য বোধহয়, কিন্তু সেই কফিছাপ,

খুঁটিয়ে দেখা চড়ুইশিল্প, শার্টের হাতায় লেগে থাকে দাগ

কৌতূহলী চোখের জন্যে। দুজনে কথাটার মাঝখানে যে ফাঁক,

সেই স্পেসে এখনও ডানা মেলেনি যশ বা অমরত্ব,

টানলে বাড়ে সেই ফেব্রিক। শূন্যতার বিশেষ উপাদানই

এই। আমি একবার আঙুল তুলে দেখিয়েছিলাম উড়ে যাওয়া

পাখি, তার সঙ্কোচ, মুখটা একটু খোলা খিদেতে –

 

এনট্রপি জিতে যায় শেষে আমাদের আধ ঘন্টায়, বিরহও,

ঠোঙা ফেঁসে বাদাম গড়িয়ে পড়ে, চানাচুর,

দ্রুত গড়ায় তারা ঢালুতে তরল, কিন্তু থেমে গেলেই জমাট

বা সান্দ্র, মুখে বিদেশি ট্যুরিস্টের বোকা বোকা হাসি।

 

সত্যিই কি তুমি আমাকে কুড়িয়ে গার্বেজে ফেলে দেবে?







মীরা মুখোপাধ্যায়

 নদীর পাড়ে বাড়ি 


মৃত্যু নামের একটি নদীর পাড় ঘেঁষে 

বাড়ি বানিয়েছি আমরা।

এবেলা ওবেলা সে নদীর পাড় ভাঙে, 

ঝুপ করে তলিয়ে যায় রঙিন নির্মাণ,

অ্যাকোরিয়ামের গোল্ডফিশ অম্লজান 

প্রবেশ পথের ঘুলঘুলি বেয়ে নদীতে হারিয়ে যায়,

মৃত্যু নামের নদী....

ব্যালকনি থেকে আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি

সে নদীতে মন্দ মন্দ হাওয়া দেয়, ঢেউ ওঠে...

মজা একটাই, যার পাড় ভাঙে সে দেখতে পায় না




সব্যসাচী পণ্ডা

 লগ্ন


 লগ্নের কথা ভাবিনা আর,শুধু বলি থাকো

থাকো অনন্ত কাল

আমারই মেধায়,আমারই চেতনায়।

এই মন্ত্র বল,অযুতের নিজস্ব ছায়ায়

তারই সাধনায়

নিভৃত যাপনের গান, নিশানায় বাঁধা থাক সেই অবসর


থাকো থাকো থাকো,এই কথা বলে শুধু আমার শুদ্ধ স্বর।



তুষার ভট্টাচাৰ্য

 হৃদয়পুরে    

ভালবাসা যেন হলুদ দুপুরে নদীর জলে নাইতে নামা
কিশোরীর টলটলে মুখ,

মাটির উঠোনে ভোর শিশিরের জলে জেগে ওঠা আলতা পায়ের চিহ্ন ;
ভালবাসা যেন বইয়ের ভাঁজে লুকোনো গোলাপী চিঠি, ময়ুর পালক,
মধ্যরাত্তিরে কান্না জলে ভেজা বিরহী আনমনা কিশোর বালক ;

ভালবাসা যেন নিঝুম রাত্তিরে অলৌকিক জোছনায়  

বহুদূর থেকে ভেসে আসা নিশি ডাক,

হৃদয়পুরে নীরবে ঝরে পরা অশ্রুজল, মনস্তাপ l



অচিন্ত কর্মকার

আপেক্ষিক

ভোরের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে
যে লাবন্য ছড়ালে তুমি,তাতে রাঙা হয়ে
পুলোকিত মনে সবুজে সবুজে ভরিয়ে তোলে
আমার তিন কাঠা জমি।

নৈসর্গিক সুখের সন্ধানে পায়চারি করে
শ্রাবণের ঘন কালো মেঘ ।
আমি জমির উপর দাঁড়িয়ে,খুলে দিয়ে জামা
এক পশলা বৃষ্টির অপেক্ষায়।
তির তির করে বয়ে যাবে
আমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে।
অবরুদ্ধ কণ্ঠে মুষ্টিবদ্ধ হাতে,ফিরে যাবো
এই কালো মেঘ থেকে বহু দূরে।
আগত কাশের সন্ধানে, নামহীন এক নদীর বুকে।
দু-কুল ছাপিয়ে তুমি হাত নেড়ে বিদায় জানালে,
ফিরে এসে তোমার আধভিজা চুলে একটা টগরের
ফুল গুঁজে দেবার অধিকারবোধ,ছুটে এসে বলে
আমায় ক্ষমা করো।
স্মৃতির তরণী বেয়ে নাড়া দেয়
দুঃখের আবরণে ভিজে যাওয়া বোধ।



পিঙ্কু ত্রিপাঠী

মেরুদন্ডহীন

পাহাড় ভালোবেসে সমুদ্রে আসা মেয়েটা বলতে পারেনি চিরটাকাল কি ভীষণ জলফোবিয়া ভোগে সে...

নির্ভেজাল এক দাঙ্গা সিলিং ফ্যান আর টেবিল ফ্যানের ভেতর..
ব্লেডের গায়ে ধুলোর পর ধুলো জমে তৈরী  আস্তরণ ঢেকে দেয় পোড়া ঘায়ের বালুচর..
চিংড়ির রক্তের মতোই বর্ণহীন মেয়েটার মুখ
  আর মেরুদন্ডহীন শরীর। 

             
  বি-মুগ্ধতা
                    
কবির কলমে যে বৈচিত্র খুঁজে অনায়াসে কেটে যায় এক জীবন, তার আর প্রয়োজন পরে না নামের....
যাযাবর পাখির মতই উড়ে বেড়ায় এক দেশ থেকে অন্য দেশ,
এতো কবিতা আনন্দের, বন্ধুত্বের, ভালোবাসার !
এতো মুগ্ধতা সিঁদুরে মেঘের মতোই ভয়ঙ্কর,
ঘেঁটে যাওয়া বন্ধুত্ব হোক বা চুল অনায়াসে ছড়ায় বিশৃঙ্খলা...




হামিদুল ইসলাম

পাতাঝরা দিন                                           


পাতাঝরা দিন
নক্সিকাঁথায় আঁকা ক্লান্তির মেঘ 
মেঘের শরীর জুড়ে বৃষ্টি। ভিজে যায় রাত।

বন্দরে বন্দরে কারুকাজ করা দিন 
দলিত সময় 
ছায়া ছায়া যুদ্ধ। প্রতিবাদ 
ণিজন্ত অক্ষর সম্পর্ক প্রতিদিন পুড়ে পুড়ে ছাই।

রাতের বয়েস বাড়ে 
বেড়ে যায় মনের উদ্বেগ 
বিবর্ণ প্লাটফর্ম ছেড়ে যায় রাতের শেষ ট্রেন। 

আজ বৃষ্টি নেই একফোঁটা...

গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...