December 27, 2020

সম্পাদকীয়

কবি শম্ভু রক্ষিতের কবিতা ঘিরে আছে একরাশ মুগ্ধতা, আশ্চর্য  মহাজাগতিক আলোর জোছনায় স্নাত তাঁর গদ্য কবিতা, ঝরণার মতো উচ্ছ্বাস, সহজাত ধারা, কোলে কোলে সাদা, কালো নুড়ি পাথরের মতো চেনা অথচ অচেনা শব্দমালা। অদ্ভুত এক মায়াজাল পাঠককে সম্মোহিত করে, আর একবার পড়তে বাধ্য হয়। 

শম্ভু রক্ষিতের কবিতা-প্রকরণ সবার থেকে আলাদা, তাঁর শব্দচয়ন, ছন্দ এবং পংক্তির বিন্যাস অনুপমীয়:

"তোমার ঘর্মাক্ত মুখের ওপর মশালের রক্তরং আলো, তোমার অন্তরের এই রকম উজ্জ্বলতা, সবই গহ্বর ও আমার এই ধরনের বিষয়;তুমি কি আন্দোলিত ধূসর পাথরে? ঘূর্ণি চাকায় পালিশ করে পৃথিবীর চন্দ্রমুখী একটি তারা।...

তুমি ছিলে জীবিত, এখন মৃত, তুমি কণিকা ও সূর্যের

মধ্যে বিন্দু ও বিস্ফোরণজাত গোলাপ। "

(প্রিয় ধ্বনির জন্য কান্না, তৃতীয় কবিতা) 


"মহুয়ার দেশ" চতুর্থ সংখ্যা (ডিসেম্বর সংখ্যা) প্রকাশিত হল।

এই সংখ্যা উৎসর্গ করা হয়েছে কবি শম্ভু রক্ষিতকে। 


অভিষেক সৎপথী, 
মহুয়ার দেশ
ডিসেম্বর সংখ্যা, ২০২০











গোলাম রসুল

 মর্মর মূর্তির নৃশংস বিশ্রাম

দ্বিধাগ্রস্ত  সূর্য
সূক্ষ্ম কুয়াশায় পৃথিবীর ত্বকের ওপর 
আমাদের আস্তানা

মর্মর মূর্তির নৃশংস বিশ্রাম

যখন রাত্রিতে নিঃশব্দে আমাদের হাতে
উঠে এসেছে অসংখ্য নক্ষত্র

তারপর আমরা গরীবদের শেষ ঘরগুলো
পর্যন্ত হেঁটে যাই
আর আলোর গায়ে হাত দিই

শেষ পর্যন্ত আমাদের চলে যাওয়া কেউ
এঁকেছিল কিনা জানিনা
        

বহমান হাত

যখন কোনো বহমান হাত পৃথিবীর সব
নদীগুলোকে অতিক্রম  করে চলে যায়
আমি ভোর পর্যন্ত জেগে থাকি

নক্ষত্র পল্লী  থেকে বেরিয়ে
রাত্রির পলি গুলো সরিয়ে
পাহাড়ের মতো মায়েরা নেমে আসছে
তাদের সন্তানদের জন্যে

যুদ্ধ আর লোহার মতো বেঁচে থাকা

বজ্র বিদ্যুতের গায় শিরা উপশিরা
ঝড়ের গরম হৃৎপিণ্ড
মধ্যরাতে মেঘ করেছিলো
আর কর্কশ নিদ্রার ফাঁক গুলো দিয়ে
ঢুকছিলো দুঃস্বপ্ন
নিরীহ পশুদের সমাধির মতো
এখন নদী গুলো
আর আগ্নেয়গিরির বৃষ্টি সূর্য
আমাদের অশ্রুগুলো যখন দাবানলের মতো
তারপর উড়ন্ত শকুনের জমায়েত

শূন্যের মুখে আমরা ঢুকিয়ে দিয়েছি জাহাজ
আমাদের শিশুরা উলঙ্গপনা হয়ে ঘুরছে শীতের চাঁদে
আর আফ্রিকার একটি মানচিত্রের মতো আকাশ

চোখের ভেতরে খোদাই করা অদৃশ্য
স্পর্ধিত কানে গুঁজে রাখা নৈঃশব্দ্য
আর হাতের বাহুর নৌকা
নিরুদ্দেশ হয়েছে সেই সব মনুষ্যত্ব  যারা কিছুই  জানতো না ঈশ্বরের জলবাহকদের সম্বন্ধে

কত হাত
ক্ষুধার ফেনা থেকে গড়ে ওঠা  পান পাত্রের মতো 
ভেসে চলেছে নদীগুলোর আগে আগে










সব্যসাচী পন্ডা

প্রেমপত্র


শীতের পাতার মত উড়ে আসে চিঠির অক্ষর।
মেঘে মেঘে যেটুকু বেলা ছিল তাও ডুবে গেল
সূর্যাস্তের পর।

তারপর সান্ধ্য আগুনে
আমরা সেঁকেনি ভালোবাসা,সঞ্চারিত ওম

শরীর জাগার আগেই
প্রেম বিলোয় শিলাই এর ঢেউ।







ঋভু চট্টোপাধ্যায়

 এক একটা ছায়া ও বন্দোবস্ত                      

                          ১ 

শরীরের স্নেহ পদার্থ তুলে রাখার গাণিতিক 

উপকারিতার মধ্যেই একটা অনাবশ্যক ভাগ চাষ।

তারপরেই একের পিঠে নামতা, মানে সেই 

দরকষাকষি ও পাশ ফেরা।এখন যতটা ঢেঁকি ততটাই 

উপপাদ্যের অবস্থান, যতটা ফাঁকতাল ততটাই 

গুছিয়ে আখ থেকে আখর কথা।বলা যায় এর মাঝে 

কোন উপযোগিতা বাদ থাকলেও সব সেই ঘর পথ 

মুখোমুখি ইচ্ছের অধীন।তার মানে আমাদের শরীর থেকে

যতটা ঘাম বের হয় ততটাই বখরা এঁটে ওঠে 

লোমকূপের ঘরবাড়ি।দেখা যাক আর ঠিক 

কতটা পরিবর্তন হতে পারে? 

                                     ২ 

এক একটা ক্রীতদাস আর টস, এখানে ব্যাটবল 

ওখানে ক্যাচ ধরবার আশায় আকাশের দিকে 

পুরুষাঙ্গ উজিয়ে একের পর এক, বোঝা যায় না 

মানুষ আর স্ট্যাচুর মধ্যে ঠিক কোন বিতর্ক উপস্থিত? 

কোন সময়কাল অখণ্ডতার অভ্যাসে খাবি খায়। 

এই যে অশরীর স্রোত এই বাতাসের পিছনে কর, 

লোকজন দেখছে অথবা কথা বলা আর না বলার মাঝে 

এখনও একটা আস্ত নাগরদোলা।

                                  ৩ 

এভাবেই ভাঙতে ভাঙতে আমার ঘর বাড়ি। 

সারি সারি বেঞ্চের মাঝখানে বসে থাকা 

এক একটা জোড় অথবা বিজোড়ের ঢেঁকি চর্চা। 

শুধুমাত্র সালোকসংশ্লেষের জন্যেই তো আর 

গাছ জন্ম ঘটে না।তাও পাতার আলপনা 

আর অভিমুখের উদ্দেশ্য ও বিধেয় বিহীন যানবাহন। 

জানা যাচ্ছে চুপ করে বসে দেখার মধ্যেও 

যে মধু তাতে মধুমেহ ছাড়া নতুন কোন শত্রু নেই। 

                   

                             ৪ 

বৈঠক ও চুপ করে বসে থাকবার মধ্যে এই যে 

অজাতশত্রু বন্দোবস্ত তার পাশ দিয়েই উত্তর ও 

দক্ষিণ যাওয়া যায়।প্রলাপ আর উল্কার ভেতর 

একটা নিজস্ব সমীকরণ না থাকলেও বলা ভালো 

এই যে হাঁটা চলা, এই কথা বা গান, বিশ্বাস 

ও ভাতা সব সেই ঢেঁকি।এরপর অথবা বিশ্বাস এবং 

অন্য স্বভাব, যাত্রাপথ তো এই শুরু হল।








দেব নারায়ণ

 প্রদোষকাল


 

দূর দিগন্তে

চারণকবির গেরুয়া উত্তরীয় উড়ে গেলে

কুয়াশার চাদর গায়ে সন্ধ্যা আসে উঠোনে

এই হেমন্তে।

দু’দণ্ড বসে। কথা হয়। একান্তে।

খুব ইচ্ছে করে

ওকে ফুলকপির সিঙ্গাড়া খাওয়াতে,

পারি না। তাই শুধু লিকার চা।

নিঃশব্দে চুমুক এবং নীরবে বসে থাকা।

তারপর অমল কণ্ঠে বলে- ‘আসি তাহলে,

নিশীথ আসবে এবার’।

অন্ধকার বাড়ে। উষ্ণতা নামে।বাড়ে শীত ।

এই সব রাতে উষ্ণতার দৈন্যতায় জুবুথুবু হয়ে

বসে থাকি জোনাকীর আলোয় ।

সংকীর্তনের সুরে ।

প্রবাসে ঘুম আসে না।

দীপ্তেন্দু বিকাশ ষন্নিগ্রহী

 অতিথি 


একবার  হারিয়ে যেতে বলো
ওই নক্ষত্রের আলো ঠিকরে পড়ুক নাকছাবিতে
যারা চেয়েছিল অন্ধকার 
তাদের মনের ভিতর দু লাইনের ভোরের প্রভাতি সঙ্গীত জেগে উঠুক... 


নাইবা এলে অন্তিমের মোহানার পাড়ে
হীরক দ্যূতির উত্তাপে 
যে ছলনার জলে এসে জল মেশে প্রতিদিন 
একদিন এই ছায়া দূরত্বে 
এসে দাঁড়াবো ইচ্ছায়... সুযোগ অপেক্ষায়। 











সুকুমার কর

 মুখ আজও ঢাকা বিজ্ঞাপনে

       
সেই থেকে  দাঁড়িয়ে আছি 
আজও একটা গলির কোণে 
আজও আমার মুখ দেখি না 
তোমায় দেখি বিজ্ঞাপনে

সহজ কথা নয়কো সহজ 
মুচকি হাসি চোখের কোণে 
ফেইসবুকে তা ঝলসে উঠে 
রঙবাহারি বিজ্ঞাপনে

কখন তুমি লাগবে কাজে 
বুঝতে পারা শক্ত খুবই 
হা রে আমার ধর্মভীরু
হা রে আমার জন্মভূমি 

চোখের চাওয়া মান অভিমান 
নেই জড়িয়ে ওতপ্রোত 
মোবাইলের একটি ফ্ল্যাশে 
পণ্য হলো ব্যাক্তিগত 

শঙ্খ বাবু মুখের কথা 
আজও কাঁদে  গলির কোণে 
মুখের উপর ঝুলছে মুখোশ 
আজও ঢাকা  বিজ্ঞাপনে

সুচেতা মন্ডল

উপশম

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে 
শীত এলো ।
সেই সবুজ-কালো সন্ধ্যে টা,
খোয়াইয়ের প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়া দুটো বন্য অবয়ব।
দীর্ঘক্ষণ ছায়া পড়েছে বুকের ভেতর।
দু হাতে যা চেয়েছি তা সবই  কবিতা।
কয়েকটা অস্পষ্ট ছায়া মূর্তি সেই কবিতার গলা টিপে ধরে।
পুড়িয়ে ফেলে কতগুলি উঠতে থাকা বনলতা।

তাই আগলে রেখেছি শরশয্যা
যতক্ষণ না এ যুদ্ধের শেষ হয়।




শুভজিৎ মাহান্তী

 অনামিকা

অনামিকা, তুমি থেকে যাও
আমাদেরই কাছে ।
হয়তো বা সঞ্জীবনী হয়ে
মৃত শঙ্খের শরীরে শাদা দিয়ে শাদা এঁকে দিয়ে যাও আর একটুখানি 
আমি জানি, 
তোমার চোখে এখন পৃথিবীর যত চিতার লালাভ আগুন,
কিন্তু চিন্তার আগুনে দগ্ধ তোমার মুখের সামনে কৃষ্ণপক্ষের নীল 
কুয়াশা এসে জুটেছে ।
দূর্বার নরম শরীরে শীতমাসের শিশিরের কবোষ্ণ চুম্বন
তোমার শরীরে কী স্থবিরতা এনে দেয় ?
অনামিকা, তুমি যেয়োনা আর
থেকে যাও আমাদেরই কাছে ।

শঙ্খ চক্রবর্ত্তী

 অ্যানাটমি

আমার অর্ধেক দিন কেটে গ্যাছে জানালার ধারে বসে এলিয়ে থাকা রোদের গায়ে মাথা বিছিয়ে দিতে। চোখে ছায়া পড়লে রোদের সাথে লাবন্যতা ঘনিষ্ঠ হয়...

দিন গড়িয়ে এলে আমার বেড়ালটি আসে আমার ফেলে দেওয়া মাছের কাঁটা ঘিরে পিঁপড়ের আনাগোনা দেখে জীবনের সারমর্ম বুঝে নিতে। তারপর পাখিরা ঘরে ফিরে আসে এবং আমি উপলব্ধি করতে পারি তাদের সারাদিনের চাঞ্চল্য সেরে বাড়ি ফেরার আনন্দ।

যা আমি ফেলে এসেছি আটটি বছর আগে আমার স্কুল পালানো দুপুরের শেষে
যা আমি নষ্ট করেছি প্রেমিকার নাভীমূলে রক্তচুম্বনে ভেজা গোলাপ রাখতে গিয়ে– কবিতা লিখবো বলে।

অথচ এই করতে করতে আমার ঘরে রাত্রি নেমে এলেও আমি চাদর মুড়ি দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে শুয়ে থাকি
কখনও কুয়াশায় গলা সকাল থেকে বেরিয়ে আসা রোদের আত্মতুষ্টি দেখবো বলে। তখন এতো মানসিক বাহার ও আড়ষ্টতা থাকবে না। আনন্দ বলতে তখন অলস দুপুরে চাঞ্চল্যহীনতার দায় মাথায় না নিয়েও প্রেমিকার ছবি এঁকে কাটিয়ে দেওয়া যাবে।
কবিতার কাছে মাথা নত করে শিখে নেওয়া যাবে, কবিতা লিখতে গেলে প্রেমিকার ঠোঁট ও নাভীমূল জরুরি নয়।







ঐন্দ্রিলা মুখার্জী

ভোরের জন্ম ও মৃত‍্যুলগ্ন

কুয়াশার শ্লীলতা ছিঁড়ে ওই যে বেরিয়ে আসছে বিদ্রোহীর রক্তের মত আগুন,
তার‌ই শিরা-উপশিরায় গুনগুনিয়ে ওঠে এই শহরের রঙ্গমঞ্চ।
চায়ের ধোঁয়া প্রেমিক পুরুষের মত বুক পেতে দেয়-
সামনের রাস্তাটায় ছড়িয়ে দেয় নিজের উষ্ণতার সেলোফেন পেপার।
কত‌ই দরাজদিল সে,
দূষনটুকুকে শাহেনশাহর মর্যাদা দিতেও যেন  দ্বিধা নেই তার।
সাইকেলের ঘন্টিরা নিজেদের মধ্যে তর্জা শুরু করে,
রোদের ঘুমন্ত ভ্রুনগুলোর প্রতি যত রাজ‍্যের রাগ তাদের!
গাছেদের গায়ে ততক্ষণে শিশিরের বয়াম উল্টে দিয়েছে আকাশ,
শ্বেতপাথরের বুড়ি পরী তাই গায়ে মেখেছে পিক্সি-ডাস্ট মনে করে।
খবরের কাগজের লতপতানি,বিস্কুটের খুটখাট আর জুতোদের বেসুরো দাদরা-কাহারবায় শহরে সকাল নামে।
মোটা দশনম্বরী তুলি দিয়ে সূয‍্যিমামা হলুদের হিজিবিজি কাটেন আকাশজুড়ে।তার‌ই মাঝে কবরস্থ হয় ফ‍্যাকাশে ভোরটা।







দীপঙ্কর সরকার

 ইতিকথা  

আমাদের ইতিকথাগুলো ঝরা পালকের মতো সটান
উড়ে গেল ঈশান নৈর্ঋত। কিছু বা ছড়াল বাতাসে
কাপাস তুলোর মতো অর্বাচীন ।স্বদেশ ছাড়িয়ে
                                                              বিদেশেও
পাড়ি দিল পৌন:পুনিক।আমাদের ইতিকথাগুলো
লোকমুখে ফেরে বংশ পরম্পরা ধরে রাখে তার
                                                               প্রচলিত
দিক। আজ একবিংশ শতকেও ইতিকথাগুলো সমান
প্রাসঙ্গিক । যখন আতান্তরে পড়ি অনায়াস উচ্চারণ
করি পৃ্র্বসূরীরা কতটা বিজ্ঞ ছিলেন আমাদের চেয়ে
যোজন যোজন দূরহস্ত মহা পণ্ডিত ।





সুমন দিন্ডা

হাওয়া

দাদা নতুন কিছু দেখান, এসব পুরানো 
সব জায়গায়, সব দোকানে শুনতে পাবেন একথা,
জামা, জুতো, গয়নাগাঁটি অথবা মোবাইল ফোন 
সবকিছু আমাদের নতুনতর চাই।
কিন্তু পুরানোদের কী হবে?
তাদের পড়ে থাকার যন্ত্রণা 
বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কা
কীভাবে তাদের মৃত্যু ডেকে আনে
সেকথা কারা তলিয়ে খোঁজে? 
কিন্তু আপনার মতো কলমবাগীশ যাঁরা 
তাঁদের কাছে আবার নতুনরা গুরুত্বহীন, 
ওদের ভাবনা ধার করে আপনার চকচকে টাঁক
অথচ লিখতে জানেনা বলে ওদের 
ফেলে রাখেন শেষ পংক্তিতে।
আপনি চমকিত হন কিন্তু দেখান না,
সাহসকে ভয় পান কিন্তু বুঝতে দেন না।
ঠিকমতো চর্যার অভাবে শুকোতে থাকে চারাগাছ। 

আমি এখনো ভাবছি 
নতুন না পুরাতন কোন পথে হাঁটলে
একটা অবিশ্বাসকে সরে যেতে দেখবো
ভোরের রাতের মতো।






বৈদূর্য্য সরকার

 অতীত ট্যুর 


আমাদের অতীতে কুয়াশা ভবিষ্যৎ অন্ধকার
কেঁপে ওঠা পথে চিবুক ছোঁওয়া রাতে
স্বমেহনে ঠকে যাওয়া জীবনে দন্তশূল জাগে
গভীরে কাঁপন, ডিসেম্বরের সন্ধেয় মনে হয়
কোথায় কে যেন ফিরে ফিরে ভর সন্ধেয় গাইছে
'প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে'। 

সকালে কুয়াশা থেকে বিকেলের ক্ষত
সন্ধের প্রদাহ রাতের জোনাকি আকাশ ভরা তারারা...
কোথাও না গিয়ে এবছর স্মৃতিতে ভেসে বেড়ানো। 

জঙ্গলে সেবার আদিবাসী ধনুকের ছিলা থেকে
ছুটে গেছিল পাগলা ঝোরা, মাওবাদী ভয় ভুলে
মহুয়ার খোঁজে ছুটেছি বেতলা থেকে ঘাটশিলা,
আমরা আগুন জ্বেলে ঝলসে নিয়েছি
হাট থেকে কেনা দেশি মুরগির মাংস
শীতের রাতে সুবর্ণরেখা আমাদের বলেছিল
এভাবে গোপনে শেষ দেখা... এরপর থেকে এসো
সাজানো সংসারী হয়ে, তারপর যাওয়া হয়নি ।

ফাল্গুনে হাজারিবাগে পলাশের জঙ্গলে দেখেছি
প্রকাণ্ড মৌচাকে ঝুলে আছে যৌবনের অস্থিরতা,
তাতে ঢিল মারার চেষ্টায় কেটে গেল বছর দশেক। 
তারপর আমাদের মহামারী এল, সংসার সাগরে 
কোনওরকমে ভেসে থাকার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া,
সব ভুলে আজকাল বিষন্ন সন্ধেতে
ঘরে বসে কালো কফি পান আর অতীতচারণ। 








সমাজ বসু

 এই শহর


অনেক শোকে আমার এই শহর ফুল রাখে,
মোম জ্বালে অকুস্থলের দরজায়-
কালো শব্দের মৌন মিছিলে পা রাখে-
অথচ-
পাশার চাতুরী জেনেও কী ভীষণ মূক শহরের 
ধৃতরাষ্ট্র চোখ।
এইরকম সমাধির ঘাস মাড়িয়ে নীপবীথির ছায়ায় হেঁটে যাবে কতদিন
দুঃশাসনের দল;
আর নয়-
এইবার সন্ধির রঙ মুছে আজীবন সাজিয়ে রাখা বিশ্বাস ভেঙে
নিশ্চিত ছুঁড়ে দিক-
তাদের মলিন ও অসৎ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সুকৌশল ক্রোধ,এবং
চোখ মুছে অদৃশ্য তর্জনী তুলে ধরুক আমার এই শহর।






গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...