October 10, 2021

মীরা মুখোপাধ্যায়

 উত্তমকুমার 


তাকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি

হ্যাঁ, এখনো। হয়তো আবেগ স্তিমিত হয়েছে খানিক 

হয়তো এক এক দিন একবারও মনে পড়ে না তাকে

তবু , তবু.....

আকাশ সমুদ্র কিংবা রবীন্দ্রনাথকে 

ভালোবাসার মতো করে নয়......

একটি পুরুষকে যেভাবে সেভাবেই......

কতোবার যে তাকে আমি মনে মনে 

সমুদ্রশহরে নিয়ে গেছি! 

আমার এ প্রেমে বন্ধুরা হাসতো...


এখন নিশ্চিন্ত আমি,

মহানায়িকারা কেউ নেই।

অন্যরাও তেমন আর হা পিত্যেশ করেন না

 

 ছবির ভিতর থেকে এখন সে

আমার দিকেই চেয়ে থাকে, অপলক 

একান্ত আমার দিকেই



তৈমুর খান

গুচ্ছ কবিতা

১.

রোদ পড়ে গেলে 


যা কিছু বলার ছিল 

সব পাপ 

দুধ পান করে করে

কখন বড়ো হয়ে গেছে 

ভোরবেলার সাপ 


এখন নিশ্চুপ বারান্দায় তাকিয়ে থাকা 

দূরকে কাছে ডাকা 


রোদ পড়ে গেলে অন্ধকারের হাতে হাত 

নগ্ন ছোবল শুধু, দু এক পেগ্ বিমূঢ় মদ 


          ২

শুধু বিজ্ঞাপন


মূর্খের সন্তান 

বাতাপি লেবুর গন্ধে জাগে 


কোকিলের ইংগিত তার মঙ্গল কাব্য 


জলাশয় থেকে ভোর তোলে 


একটি ঢেঁকির কল্পনায় 

সম্পূর্ণ পাড়া গাঁ 

নবান্নের স্বপ্নে দোল খায় 

তারপর রেললাইনের দিকে আনমনে হাঁটে 


ধোঁয়ামাখা মুখ কার ? 


ধান দূর্বার মুখ মুছে গেলে 

শুধু বিজ্ঞাপন হাসে 

               ৩.

 মৎস্যরমণী


চোখ সরাও, কল্পনাকে দেখি 

আলতামাসির পর এই প্রথম রমণী 

আকাশী রঙের শাড়ি পরে দোলায় মাথার ত্রিপল্লি বেণী 

চার প্রহর কেটে গেলে ডুবজলে এখনও আগুন 

মাছগুলি চেয়ে আছে, ঢেউ ওড়াচ্ছে 

আলগোছে সুর তুলছে, তাদের মুখে জলবাঁশি 


         ৪.

 অজ্ঞাত 


এক একটি রঙিন চিতা জ্বলে উঠলে 

করুণ চিৎকারগুলি নিভে যায় 

মেঘ সমাগমে সূর্য গুটিয়ে নেয় রোদ 

যদিও রোদের ভাষা তখনও থেকে যায় এবং

কার ঘর সংসার ভেঙে বয়ে চলে যুগ ? 

যুগের গুহায় লুকিয়ে থাকি 

শ্রীরামকৃষ্ণ ভোর ভোর জবা তুলে নেয় 


জবা কি সারাতে পারে সেসব অসুখ ? 


  ৫

ক্রমশ উদ্বাস্তু দিন


এরাও মানুষ ছিল

অন্ন বস্ত্র প্রেম আর স্বপ্নের পাখি পুষে

প্রতিরাতে ঘুমোতে যেত নারীর পাশে


সন্তানের জন্ম দিতে দিতে

পার করে দিত সব আয়ু

আজ শুধু ঘরের দরজায় হাহাকার

এঘর তাদের ঘর নয়

এদেশ তাদের দেশ নয়

সীমাহীন আকাশ ভেঙে পড়েছে মাথায়

কোথাও যাবার রাস্তা নেই


তাহলে জীবন, তুমি কীভাবে বাঁচতে চাও আর?

আর কী শুনতে চাও নতুন সমাচার?


ওই তো মানবিক রাষ্ট্র আজ আর মানুষের নয়

ক্রমশ বিদ্বেষ এসে আস্ফালন করে

ক্রমশ উদ্বাস্তু দিন নামায় অন্ধকার..


৬.

অবকাশ 


আমার অবকাশকে কখনো ঘুমোতে দিইনি 

খাঁ খাঁ শূন্যের ভেতর সে ছুটছে 

ম্লান হয়ে আসা দুপুরের উঠোনে 

আজও আমি উৎসাহ ছুঁড়ে দিচ্ছি


নিস্তব্ধতার হাততালি বাজছে 

মুহুর্মুহ ঘুঘু ডাকছে 

জল গড়িয়ে যাচ্ছে অন্যজলের দিকে 


আমি নতুন কিশলয়ের বার্তা এনে তাকে দিচ্ছি


হাসো অবকাশ , বিচ্যুতির ক্লাসে গরম আবহাওয়ায় 


নিরাভরণ সময়ের দোদুল সীমানায় 

কে কার কার সাথে শুয়ে যাচ্ছে এখন 


আর ঘুমের ভেতর নরম মাংসের স্বাদ


উচ্ছ্বাসগুলি ঝাঁক ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে

বিক্রমশীল নদীর দিকে সংকল্পের শিহরনগুলি 

শ্যামলমায়ায় ছলছল ছবি হয়ে যাচ্ছে 

ঘনীভূত মেঘে লুকিয়ে যাচ্ছে দানা দানা অনুভূতি


      ৭

দুর্জয় চাঁদ    


কল্লোল ভেসে যাচ্ছে রাস্তায় 

আমাদের কথারা নৌকার বিশ্রামে 

দুলছে 

কোথাও যাচ্ছে না 

রোদমাখা বাতাসে ধূসর পাঞ্জাবি 

উড়ছে 

অবেলার গার্হস্থ্য বিলাপ শুধু 

ছায়াদের নোনতা বিষাদ জমে আছে 


বাইরে নিয়ে চলো প্রজ্ঞা 

অনুভব অনুর্বর বলে 

আমরা শুধু ঈশ্বর আর ধর্মোৎসবে 

ক্লান্ত হই 

আমাদের অন্ধকারগুলি 

তমসার খ্যাতির আড়ালে 

কোনও নিয়তির চাঁদ খুঁজে ফেরে 

বড়ো দুর্জয় চাঁদ 


      ৮.

মঞ্চে মঞ্চে অদ্ভুত নাটক


 কিছু কি হারাচ্ছি রোজ ?

রঙিন শহরের রাস্তায়

দুরু দুরু বুক

আলুথালু চাহনি আমার

অসম্পূর্ণ মানুষ মনে হয়

হৃদয় গড়াচ্ছে কংক্রিট 

মায়াময় উষ্ণ নাভির স্রোত

ভাসিয়ে দিচ্ছে আমার সংগৃহীত মূল্যবোধ।


শূন্যে পাক খেতে খেতে

মঞ্চের দিকে চলে যাচ্ছি 

মঞ্চে মঞ্চে অদ্ভুত নাটক


কিছু কি হারাচ্ছি আমি ?

আমার পোশাক কেড়ে নিয়ো না শহর

সম্ভ্রমটুকু থাক

নিজেকে নিজের মতো দেখি

আমার ভিতরে আমি গ্রামকে বাঁচাই !


  ৯.

 নির্ঘুম পাথর


এখানে তেমন জায়গা নেই ,দাঁড়ানো যাবে না

তবু কেন ঘুমোবার সাধ জেগে উঠে ?

স্বপ্ন আসতে চাইছে বলে

মনে মনে নিত্য আয়োজন


কোলাহলের প্রাচুর্যের ভেতর থেকে 

নিজেকে টেনে নিয়ে এখানে এসেছি

এখানেও ব্যাভিচার পড়ে আছে

মৃত স্বপ্নের ভ্রূণ, ভ্রূণের হাহাকার

হৃদয়ের নিরীহ অশ্রুপাতে ভেজা মাটি


এখানে কি সুস্থতা থাকে ?

সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যাওয়া

শূন্যতায় ঘুরপাক খেতে খেতে 

পাথর হয়ে যেতে থাকি 

নির্ঘুম পাথর এক


           ১০.

করুণ সংকল্পটি


বেশ নাচ্ নাচ্ মনে হচ্ছে পৃথিবীকে 

এত ঢেউ উঠছে, হাসির ফোয়ারা ছড়াচ্ছে 

আর কলকাকলির জোয়ার আনছে 

সকাল থেকেই উৎসবের মেজাজ 

আমার মৃতদেহ কোথায় রেখে যাব তবে? 


শকুনেরা মাংস ছোঁবে না, 

কীট পতঙ্গেরা ঘৃণা করবে 

আমার চেতনারাও কি তবে 

জল প্রবাহে মিশে যাবে না? 

এই মাটিতে শুয়ে শুয়ে রোজ  

বৃষ্টিকে ডাকি 

মেঘ আর বাতাসের বৈভবে 

নিজেকে সঁপে দিই 

তবু আনন্দযজ্ঞে আমার এই 

                  আহুতি ভয় 


কবি পরিচিতি : জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে। 

পিতা ও মাতা :জিকির খান ও নাওরাতুন। 

পড়াশোনা :বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি। 

পেশা : উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক । 

প্রকাশিত কাব্য : কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃষ্টিতরু (১৯৯৯), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা (২০০৪), বিষাদের লেখা কবিতা (২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ (২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর (২০০৮), প্রত্নচরিত (২০১১), নির্বাচিত কবিতা (২০১৬), জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা (২০১৭) ইত্যাদি। 

পুরস্কার : কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার ও দৌড় সাহিত্য সম্মান, নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার, কবি আলোক সরকার স্মারক পুরস্কার ইত্যাদি ।

ঠিকানা : রামরামপুর (শান্তিপাড়া), রামপুরহাট, বীরভূম, পিন ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।




















          





সব্যসাচী পণ্ডা

 পরিচর্যা

    

অদৃষ্ট মানিনা,জানি আলোর বিপ্রতীপে আঁধার...

তোমার হাতের মুদ্রাটুকু জানি

হিজিবিজি স্খলিত রেখার সম্ভার।

যে হাতের ছোঁয়ায় জেগে ওঠে 

রোদ আর কোমল সুর বাহার...


কাল রাতে বৃষ্টি হয়েছে ভীষণ 

তোমার কচুপাতায় জমেছে কি জল

তোমারই পরিচর্যায় স্বাধীন অথচ টলমল!



দীপঙ্কর সরকার

 দু'টি কবিতা


তর্জমা 

তোমাকে তর্জমা দ্যায় অমল বাতাস

বিশুদ্ধ উচ্চারণে স্পষ্ট হও তুমি ।

তোমার লাবণ্যের স্বেদ ঝরে পড়ে

ঘাসের ডগায় আর তোমার হাসি

চিত্রিত হয় শিশিরে সুন্দর ।


তোমাকে বর্ণনা দ্যায় আদুল আকাশ

যে তুমি নক্ষত্র সভায় খিল খিল নেচে

ওঠো জলহীন জলের মুদ্রায অসংখ্য

রূপের মাঝে অনুরাগে সিক্ত হও নিজেকে

যতই রাখো মোহিনী আড়াল ।


ভাগ্যরেখা  

যোগাযোগের চিহ্ন মুছে একা একা যাপন লিখি
থেকে থেকে ফেরববাজ হাওয়া এসে রাঙায় চোখ
আমি তার সন্ত্রাস গোপন রাখি । অকুস্থলে যাই না
কখনও যেখানে রক্তের দাগ সে পথ মাড়াই না আর ।
সেই কবে হাত কি সাফাই খেলেছিলাম মনেও পড়ে না , স্মৃতি দুর্বল ক্রমশ । কী ফল অনুতাপে ভাগ্য ফেরে না যখন , তুকে তাকে কেন যে বিশ্বাস রাখো কী
হবে অঙ্গুরী ধারণে বলো কুষ্ঠি বিচারে ভাগ্য না ফেরে যদি , নিজেকে সঁপে দাও কোনো দৈব পাদমূলে ।








হামিদুল ইসলাম

 গাছ                                      

কচি কচি চারাগুলো ধীরে ধীরে বাড়ে

বেড়ে ওঠে গাছ 

এ জীবন ভাঙে গড়ে নির্জন সৈকত 


তোমাকে ছুঁয়ে দেখি কোমল শ্বাস 

পাতার কুটিরে নিঃস্ব এ জীবন 

নিঃস্ব রাতের পক্ষাঘাত 


মাটির প্রদীপে নেমে আসে জোনাক রাত 

মহুয়ার সুবাসে ভরা সান্ধ‍্য উঠোন 

অভিমানী সংলাপ 


একছাদ রোদ হাতে নিই 

তোমার হাতে রাখি বাসি রোদ 

আমাদের গাছে রোদ। গাছগুলো এখন বোধি লাভ করছে




 

তুষার ভট্টাচার্য

 রোদ্দুরের জামা পড়ে 


দু'চোখে দুঃখ মেখেছো এত অশ্রুর

হিম কুয়াশায় ঢেকে গেছে

তোমার হৃদয়পুরের নিভৃত ঘরবাড়ি ;

একবার শুধু একবার

যদি ইশারায় ডাকো তবে আমি

নবীন কিশোরের মতোন

ঝিলমিল রোদ্দুরের জামা পড়ে

দুরন্ত পায়ে তোমার কাছে 

ছুটে যেতে পারি। 



স্নেহাশিস মুখোপাধ‍্যায়

নিউরো 

(১)

নিঃস্বর 

কি ঘুম ভাঙালি রাত্রিচর?

সন্ধ্যাবেলায় তোর মুখ দেখি কি নিঃস্বর!

আড়ালে ভাঙছি নিজের পাথর, 

স্তব্ধ, গড়িয়ে ঘামছি।

সাত তাড়াতাড়ি লিখছি মৃত্যু

প্রজাপতি-জর্জর!

সন্ধ্যাবেলায় দেখিনি তো মুখ!

আড়ালে লিখছি, কি মিথ্যুক!

মিশিয়ে দিচ্ছি, যা মিশছে না - 

মেলাচ্ছি ভুলচুক!

কি ঠোঁট ভাবালি মেঘবিভব?

বানানে কয়েদী, মেজাজে আহির ভৈরব!


(২)

মানসী

টিনের যুদ্ধ, যোদ্ধা সাজছি প্রভু।

তার আগে বৃষ্টি পড়ছে।

আগে চৌকাঠ, পরে মন্দির

অভ্যন্তরে তিনি। কাঠামো উঠেছে।

পলি, গঙ্গার কতোদূরে।

এখানে আসেনি, বাসে যেতে হয়, কেন যেতে হয়!

যেতে চলন্ত বাসে আগুন - শট সার্কিট - 

তেলের পাইপে আগুন লেগে গেছে।

কাঠামো রয়েছে। কাঠামো পুড়ছে...ঢেউ...

অভ্যন্তরে তিনি। কতোদিন তাঁকে যত্ন করেনি কেউ।

(৩)  

শ্লোক

বৃষ্টি সোৎসার, 

বৃষ্টি, সাক্ষীর ঠোঁট।

ঘুমটা কম হোক। 

যমটা নিঃশেষ-শ্লোক। 

স্তব্ধ পাঞ্চাল ঘরগৃহস্থের

ভস্মে মন্থরা কার্যনির্বিষ!

শেষটা পুষ্পক

পাহাড়ে আছড়াক!

জড়িয়ে নেমে আয় গোলচুমুক।

কষাটে দু-ফোঁটা, জিভ তো জানবেই, 

কেন না পাহাড়ের অম্লরোগ।

তুমি তো জানবেই

বৃষ্টি সোৎসার...

যমটা নিঃশেষ শ্লোক! 


(৪) 

আঙ্গিক

সারা পৃথিবীর কোণে

একটুকরো সন্তাপ লিখে দিতে পারি।

কিন্তু তোমার কাছে সন্তাপজয়ী?

লোহার কাঠামো কখন যে ধূপস্নান করে!

যে তীরে গঙ্গাজল, সে তীরেই লহরী!

লোহার কাঠামো কখন শান্তিপাঠ করে?

লিখছি সন্তাপ একটুকরো তারই ওপর! 

(৫)

সন্দর্ভ 

হয়তো তোমারই ধুলো

জুটিয়ে নিয়েছি সেই সম্বল!

লুকনো সর্পাঘাত

আলোটা ভাঙলে মাথা ফাটতো।


আগে কি জানতো ওই বাঁধানো মঞ্চ?

যেন গোকুলে আন্দাজ - মরবে কৃষ্ণ!

কি যেন ইঙ্গিত, কি যেন ইশারা... 

সেটা কতোটা ফুটপাথ, কতোটা ভাগ্য?


আজ রাধিকা কাঁদছে, ওই বেহাগ নামছে,

আর আশিতে অভিনেতা স্মৃতিতে ভার্গব।


নাকি, আমি, যে দেখছি, তার চোখটা নষ্ট।

সেটা মঞ্চে ঘটেনি, সেটা স্পষ্ট রাস্তায়।

আজ স্বর মিলিয়ে দেয় নিউরো-জেনারেশন,

সুর মিলিয়ে রাখে হত্যায়।


আলোটা ভাঙলে মাথা কি ফাটতো?

তোমারই ধুলো, জল...চিকচিক!   


(৬) 

আমি ও আমার কাটা হাত


থামতেই হাত কাটা হাত চলা শুরু করে দিলো।

একটা সূচ, আর চারদিকে ক্যামেরা - ওর।


সমুদ্রে বরফ মরে গেলো।

বরফে যে ঘাস জন্মালো

তাকে কি করে অন্ধ বলি, জাতক! 

শরীর থেকে

স্বেদবিন্দুর মতো গড়িয়ে পড়ছি একদিকে - 

বরফের আবাদভূমি থেকে।


গোলাপও খুব ধূসর!


বরফ কেটেছি - 

বরফ চেয়ো না।

নাকি ছল ভাবছো?

শান্তি অথবা মৃত্যুর খবরেও 

কোথাও এক পেগ মদ নেই!

পেঙ্গুঈন জড়ো হওয়া মানুষ নেই। 


(৭) 

পার্মানেন্ট ডিসুজারা

ও কিন্তু জানে,

গীটার যে বাজায় সে ওরই!

তবু তাকে ঝোলাবে, ধ্যাড়াবে ওই মেয়ে।

এটা ওর ভালো লাগে।

ও তো জানে - ও ছাড়া কিছুই নেই বরাতে।

তাই দু-দিন গোলমাল করে ফোন কেটে দেয়।

জানে, পার্মানেন্ট ডিসুজাটা গোয়ানীজ নয়।

হলে, এক্কা-দোক্কা খেলে, ও কেটে পড়তো। 

ডিসুজা কি মেয়ে হয়, মেয়ে হলে মরতো।

আহা, তা বলে কি কবর খুঁড়বে না কেউ?

আমরাও গানে গানে টেবিল বাজিয়েছি।

ও শুধু মাঝরাতে ঘোরে মেয়েদের মতো করে।

ও ছেলেটা, ও মেয়েটা, গীটার বাজাও।

ডিসুজা বাইশ, আর ডিসুজা চব্বিশ।

ও কিন্তু জানে, গীটার যে বাজায় - সে ওরই।

তাও তাকে ঝোলাবে, ধ্যাড়াবে ওই মেয়ে। 





দেব নারায়ণ

 মন্দির


এ দেহ তো মন্দির নয়,

মন? সেও কলুষিত।

অন্ততঃ লোকে তাই বলে।

অথচ সম্ভাবনা ছিল

পদ্মপাতায় জল হয়ে থাকার।

মরিচীকা ছুঁয়ে দেখার প্রয়াসে

দেহ ও মনের বিকার।


আলাদিন বহু বার এসেছে

আশ্চর্য প্রদীপ জ্বালানো হয় নি

মন্দিরে, 

শুধু গালিচা টুকু নিয়েছি চেয়ে

তোমার আসার পথে বিছিয়ে

দেব বলে।


এই অবেলায়, মনে হয়

দেহ মনকে মন্দির করে তুলতে

চাই নি আমি,

আসলেই তোমার স্পর্শে

দেবতাকে জাগ্রত করতে চেয়েছি।



বদরুদ্দোজা শেখু

 গুচ্ছকবিতা

  অবয়ব


শীতে বড়ো জীর্ণ আছি,জবুথবু আছি

এক গাছি লুঙ্গী গামছা ধড়া-খদ্দর গায়

খোলা পায়ে সব পিতামহ-'মহীরা যাতায়াত করে

ভিটেমাটি নদীঘাট আমন ধানের মাঠে

জবজবে ভেজা ঘাসে লিকের ধুলোয়

ডাঙাডহর পুকুর কুয়াশার ধোঁয়ায় ঢাকা

হাড়-কাঁপানো গুহার অবয়ব


 ছায়ারা


ঘাই ধ'রে থাকে শীত উঠোন চাতালে

মনমরা বিধবা শাড়ির অনুপানে

ঘরাঘরি চরবস্তি ঝুপসি শালিক

মাইক ডিজে অপেরায় শহরতলি পথে নামে

রাতে উষ্ণতার আবেদনে, বনে বনে 

গাছেদের পাতা বেয়ে টুপটুপ হিমজল ঝরে

বরফশীতল ছায়ারা ছায়ায় লুকায়


আরণ্যক


ধুলোবালি মেখে আরণ্যক সব

পূর্ব-পুরুষেরা গোল হ'য়ে ব'সে থাকে

কাঠকুঠো ঘাসপাতা পুআল-খড়ের

জ্বলন্ত আঙার ঘিরে, পোড়া আলু পোড়া মাংসে 

নিশীথের ব্যথা স্তিমিত হ'তেই আদিম খিদেয়

অস্থিরতা ধড়ায় খদ্দরে জড়াজড়ি

জ্বলে' উঠে লিঙ্গচর ধড়ের আঙার


গল্পের


ঘাড় কাত ক'রে চলে আদিম ছায়ারা

দায়বোধে দুঃখী অসুখী মনে

অপার্থিব ঝাড়-লন্ঠন হ'য়ে জেগে থাকে

টুকরো টুকরো গল্পের জোনাকি








বিশ্বজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

অনন্তের পথে


অনন্তের পথে যাব বলে
নতুন লেখা কবিতা দিয়ে 
কাগজের নৌকো বানিয়েছি
কেউ তো পড়বে না
অক্ষরগুলো ভেসে যাক
অরুন্তুদ বৃষ্টিফোঁটায়। 

আসলে যাবার আগে সব ত্যাগ করতে হবে
শব্দ, শব্দের প্রতি মোহ - সবকিছু
কথা, কথ্য ঠোঁটের মানুষ - সবাইকে।

হেঁটেই যাব, একা
তারাদের পথে বাস-ট্রাম মেলে না
কন্ডাকটর নেই যে স্টপেজ বলে দেবে।

অনন্তের পথে চলে যাব বলে
পকেটভর্তি শূন্যতা সাথে নিয়েছি। 



তীর্থঙ্কর সুমিত

দু - এক কথা ৮


এখানে আসলে,দক্ষিণের বারান্দায় যেনো 

ক্রমশ আড়াল করা বিকেল

সময়ের সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে

ঋজুরেখার বহুতলে উত্তরের হওয়া

ভাসমান স্রোতে বয়ে গেছে ছেলেবেলার অক্ষর


মাঝিরা নৌকা ভাসায় একটা ঘর আঁকবে বলে।





দীপ্তেন্দু বিকাশ ষন্নিগ্রহী

 খাঁচা

মুখ বুজে চেয়ে আছি যেটুকু আচ্ছাদন 

ভীত নই পড়ন্ত বিকেল

এখন আস্ফালনে তেজহীন মেঘেদের রঙ

যেসব পাখিরা আজ ফিরতে পেরেছে বাসায়

তাদের গল্প শুনি অজস্র খাঁচায়... 


মেপে দিয়ে গেছে সব বাঁচার রসদ 

সেটুকু জড়িয়ে ধরেই আসে ভোর

শৈশবের হারানো বন্ধুরা এ সময়ে

ফেলে আসা ডাকনামে যদি ডাকে

উড়বই ক্ষতবিক্ষত ডানার অবশিষ্ট পালকে। 








গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...