June 30, 2021

তৈমুর খান

কাঙাল গ্রীষ্ম



তালপাতার পাখা দাও

আজ বাতাস নেই, রুক্ষ গ্রীষ্মকাল

টুকরো টুকরো ছায়ায় আমাদের নষ্ট বিশ্রাম

অপেক্ষায় আছে


ঝড় উঠবে,

ঝড়ে উড়বে গোধূলির গান

মেহগনি পাতারা ছোঁড়ে মর্মর কাঁপন


ঠাণ্ডা জল, একটু এদিকে এসো

কী সুন্দর গ্লাস !

তৃষ্ণা আজ কিছুতেই কথা শোনে না

ডাকছে, ডাকছে তোমাকে 

তুমি বসন্তের নতুন কিশোরী হও !




বর্ষারঞ্জিনী



ছোট্ট বাড়ি, মা হলুদ বেটে দেয়

আমরা নিমপাতা চিবিয়ে দেখি

তেঁতুল গাছের বক ওড়ে

উঠোনে ছায়া পড়ে হাসে


রোজ দেখি মেঘদূত যায়


আমাদের ছেঁড়া বর্ণ পরিচয়

প্রতিটি সকাল চেনে,

বিদ্যাসাগর এসে দেখে যান

পাঠশালা বসে গাছের ছায়ায়


মেঘদূত, বৃষ্টি হবে না আজ ?

বাবা নেই , মা শুধু কাঁদে


আঁচল ভিজে যায় মায়ের কান্নায় !




যুগান্তর পথ 


তোমার কুয়ো থেকে দুঃখ তুলে নিচ্ছি 

আমার ভাবনার রশি দীর্ঘ ঝুলে নামছে 

কুয়োর পাতালে 


একাকী লণ্ঠন জ্বেলে আকাশরঞ্জিনী পতঙ্গদের 

                                                      ডাকছি 

ডানা পুড়িয়ে যাক তারা 

মৃত্যুর কি ভাষা আছে  ? 

ভাষাহীন মরে যাওয়াগুলি আমার সন্তান 

নিষিদ্ধ প্রান্তরে তাদের কবর দিই আমি 

আর মধ্যরাতে কবর থেকে তুলে 

                                তাদের প্রাণ ফিরিয়ে দিই 


বাঁচা - মরার ভেতর দিয়েই যুগান্তরের পথ 

দাঁড়ি - কমাবিহীন বয়ে যেতে থাকে অনিঃশেষ 






সব্যসাচী পণ্ডা

 ঈশ্বর

    

শীতের কুহক কেটে গেছে সবে

কদিন হল বৃষ্টি এসেছে পাহাড়ে,অসমতল ঢালে

অসম্পূর্ণ লাফ তবে সমাপন করা যেতে পারে।


অতল আহ্বানে 

ধড়াচূড়া খুলে ফেলে, মায়াকাজল মুছে ফেলে

দিই তবে লাফ 


গড়াতে গড়াতে যদি সিদ্ধির প্রলোভনে একবার 

দেখা পাই তাঁর।




সোমনাথ বেনিয়া

 ভয়সমগ্র - ২৯ 

Catoptrophobia - Fear of mirrors


তবে কি দাঁড়ালেই বুঝে যাচ্ছো পাপ-পুণ্যের ভেদাভেদ

বাহ‍্যিকরূপ প্রতিহত করে প্রকাশ পাচ্ছে অন্তরের পূর্ণচ্ছেদ

কোনোপ্রকার যতিচিহ্ন না মেনে জীবনকে লিখেছো ...

বলতেই পারো নিজের হাতে কিছুই ছিল না, সব‌ই অদৃষ্ট

এরপরেও সেসব না বিচার করে মন দিয়েছিলে রূপসজ্জায়

ভেবেছিলে এটাই সত‍্যি, চিরায়ত, বাকি সব ভুলের ক্রোড়পত্র

অথচ দেখো কীভাবে ভয় জাপটে ধরে আমোদে, অন্তরালে

আয়না প্রতারণা করে না বলেই নিজের সামনে দাঁড়াতে ভয়

দূর করে দাও কলঙ্ক চোখে-মুখে লেগেছে সময়ের পাকচক্রে

সে তো তোমার‌ই প্রতিবিম্ব আত্মজ, গ্রহণের দরজা খোলো

আনন্দ আর নিরানন্দের মাঝে উজ্জ্বল হচ্ছে আরোগ‍্যরেখা ...






মীরা মুখোপাধ্যায়

 আগুনপাহাড় 


আমি এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি আগুনপাহাড়

তুমি যেমন ছবি আঁকছো ঠিক সেরকম।

আমি দেখতে পাচ্ছি নিবছে, জ্বলছে আবার নিবছে দু তিন হাজার সঞ্চারমান অগ্নিকণা

শুধু তোমার গল্প থেকেই বাইশশো ষাট

ঝিঁঝি পোকার কাঁধ নাচিয়ে চেঁচিয়ে ওঠা

ডি লা গ্রান্ডি কিংবা কোন অবোধ্য গান....


এখান থেকে স্পষ্ট দেখছি আগুনপাহাড়....

আগুন কোথায় জুন মাসভর নেমে আসছে

পাহাড় থেকে সবুজ রঙের কি তীব্র ঢল !


এখান থেকেই স্পষ্ট দেখছি ছবি আঁকছো

ছবি আঁকছো সারাটা মাস সবুজ দিয়ে 





দীপঙ্কর সরকার

 আচরণ বিধি 


কতটা বিনয়ী হলে তবে সঙ্গ পাওয়া যায়

কতটা সহিষ্ণু হলে বলো দেখি প্রেমজ ইঙ্গিত ।

কতটা বীরত্ব দেখালে পাওয়া যায় দৈহিক নির্যাস 

কতটা গোঁয়ালে সময় সবটুকু হাতের মুঠোয় ।

বলো দেখি কতটা ঝরালে অশ্রু বন্যা হতে পারে

কতটা যত্ন নিলে রূপ জমে কানায় কানায় ।

কতটা খোয়ালে হৃদয় হৃদয় পেতে পারি , বলো

দেখি কতটা বিনয়ী হলে সহবত শেখা যায় ।


নামাঙ্কন 

 

পাতায় লিখেছি নাম এ আমার প্রথম নিবেদন

জানি বহুদূর যেতে হবে বিস্তৃত পথ , বহতা নদীর

মতো সতত আগুয়ান । 


ফিরিয়ে দাও যদি সমূহ প্রস্তাব , কিছুই নেব না

মনে স্মৃতিটুকু নিয়ে যাব । একদিন একই পথে

চলেছি কিছুটা সময় , এটুকু পাথেয় করে অবশিষ্ট

কাটাব জীবন ।


পাতায় লিখেছি নাম অব্যক্ত হৃদয় কথন ফিরিয়ে

দাও যদি সমূহ প্রস্তাব , বিমুখ হব না আমি বিনম্র

ভ্রমর যেমন । 


গুন গুন গেয়ে যাব গীতিমালা ফুলে ফুলে ছড়িয়ে

দেব , হাজার পাপড়ি পরাগ মিলন ; পাতায় লিখেছি

নাম -- সে নহে মামুলি কথন ।





রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়

 গল্প 


এক জন্মের আঁচ ফুরিয়ে আসার আগে স্মৃতির কাছে চিরকুট রেখে যায়

তুমি ভাঁজ খুলে দেখো, তারিখ পাবে। 

মুখশ্রীর পেশিজুড়ে ঘনিয়ে উঠবে একান্ত মেঘ,আকাশে ধরবে না

আস্ত একটা বর্ষাকাল রেখো, কিছুটা পর্জন্য রেখো পুনশ্চতে

যা কিছু না রাখার তাকে রেখো তোমার সঙ্গে শেষ হয়ে যেতে


ওরা ওদের মত গল্প বানিয়ে নেবে -


সমীকরণ

 

নিভৃতির সুনসান ভেতরের দিকে সিগারেটের ধোঁয়া উড়ে গিয়েছিল

ভুল মন্থনের দিকে, যার পোশাকি নাম আক্ষেপ নির্ণয়। 

এক বিন্দু শুধরে নেওয়া থেকে শুরু হওয়া রূপকথার ডানায়

পরাগ পালনের গ্রন্থিছুট সন্নিবেশে কে যেন আলগোছে রেখে দেয়

তিতিক্ষা পালক...তাকে কখনো দেখিনি! 


তবু কনফেশন বক্সের ভেতরে গিয়ে আমার পুনর্জন্ম হল।






দেব নারায়ণ

 বানভাসি

বানের জলে জোৎস্না ভেসে গেলে
অবিন্যস্ত বর্ণমালা
গহীন জঙ্গলে শমী বৃক্ষে দোল খায়।
স্থাবর ও জঙ্গমের সংঘাতে
অনিবার্য যাপন দাক্ষিণ্যে।
আশ্চর্য কবিগানে চাপান উতোর!
জরুরী প্রশ্নের উত্তর লেখা হয় না
সাদা কাগজের নৌকায় ত্রাণ।

ছায়াও অবলম্বন চায় ।
দীর্ঘতর হয় লঙ্গরের লাইন
ফুল্লরারা বারোমাস্যা শেষ হলে
দু'ফোঁটা অশ্রু মিশে যায়
নোনাজলে নিঃশব্দে।




শুভজিৎ মাহান্তী

 প্রবাহ 

  

কিছু মৃত্যু এখনো অগ্নিশয্যা ছেড়ে যেতে পারে না ।
ওদের আশেপাশে দু চারটে ভয়ার্ত কুকুর ঘোরাঘুরি করে ।
সরষের তেলের মতো হলুদ সকাল আমাকে বারে বারে মনে করিয়ে দেয় নির্জনতা ।

একটা প্রজাপতি ওই ঘি মাখানো আগুনের ঝাঁপ দিলো, তারপর একটা বোলতাও ঝাঁপ দিল,একটা মুমূর্ষু পিঁপড়েও ঝাঁপ দিল,কিন্তু মানুষ, সে পুড়ে যাবে, ঝলসে গিয়ে চোখ বেরিয়ে আসবে তবু আগুনে ঝাঁপ দেবে না কোনোদিন।

বাকি সময় টুকু শুধু আক্ষেপ আর অপেক্ষার মাঝে থমকে আছে ।বটগাছ শুকিয়ে মরে গেলেও তার গা থেকে আবার কখন যে একটা ছোট্ট সবুজ পাতা মাথা তুলবে, কেউ বলতে পারে না। 

এমনি করে বাঁশির সুরে সুরে কৃষ্ণচূড়ার সমস্ত যৌবন ফুরিয়ে গেল তবুও প্রবাহ থেমে নেই ।
কোকিল মধ্যরাত্রিতে গান বাঁধার ছলে একটা ছোট্ট সুপ্ত বীজ নিয়ে পালিয়েছে মুখে করে, 
যেমন তন্দ্রাচ্ছন্ন কারাগার থেকে বাসুদেব ছোট্ট কৃষ্ণকে এনে দিয়েছিলেন যশোদার কোলে ।


প্রসাদ সিং

 উন্নত প্রাণী

                              
পশু পাখিরা ঈশ্বর জানে না
মানুষ তবে ঈশ্বর জানে
পশু পাখিরা ঈশ্বর চেনে না
মানুষ তবে ঈশ্বর চেনে

তবুও পশু পাখিদের রেখে দিয়ে
মানুষ ছাড়া
সুন্দর
অনেক সুন্দর
হতো
এই
পৃথিবী




সুকুমার কর

 একদিন 


পরনে মিহিন ধুতি 
রাশভারী গলা 
দুবাহু দুলিয়ে তার 
ওস্তাদি চলা 
শহরে ফ্ল্যাট বাড়ি 
গ্রামে চারচাকা 
কোনো কাজ নেই তার 
কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা 
সারাটি বছর ধরে 
মেলা আর খেলা 
যখন যেখানে যান 
সাথে থাকে চ্যালা 
দাদাগিরি করে যান 
ভেঙে পাকা বেল 
পুলিশ ম্যানেজ করা 
বামহাতের খেল 
জনগণ সব গাধা 
বোঝেনা কিছুই 
বেছে বেছে তিনি 
খান রুই আর পুই 
সকলেই সব বোঝে 
রেখেছেও মনে 
ধুতি খানা খুলে দেবে 
জোরে এক টানে


অভীক মুখার্জ্জী

 নদী সম্পর্কে যা বলার ছিল

(১)

নদীরা হারিয়ে যায়।

হঠাৎ করে নয়।

ধীরে ধীরে, ক্ষয়ে ক্ষয়ে

বুকের মাঝে বয়ে চলা নদীরা হারিয়ে যায়।

গুটিকয়েক নদীপ্রেমী মানুষেরা

শয়ে শয়ে জন্ম নেয় নদীগর্ভে।

নিষ্পলক শৈশব কাটিয়ে

বসন্তের মরশুমে নিজস্ব নদী খুঁজে নেয়।


(২)

নদী কখনও বশ মানে না।

যে বশ মানে তাকে নদী

বলা যায় না।

নদীরা নির্মম

হয়ে হৃদপিণ্ডে শাঁখের

আওয়াজ তুলে

শব্দহীন নৌকার

চলাচলকে ভাবে জোছনাভিসার।


(৩)

সব নদীর সমুদ্রে নোঙর হয়না।

মোহনার নুন আর চরাচর বিকিয়ে,

নগ্ন স্নেহময়তার পোষাক পরে থাকে।

উল্টো স্রোতে গা ভাসিয়ে

কেউ কেউ হিমবাহে ফিরে আসে।







স্নেহাশিস মুখোপাধ‍্যায়

 কেউ কিছু চাইলে দিয়ে দিন  


(১)

তারপর সে তাকে ভুলে গেলো।
দুঃখের কথা আর কাউকে জানানো হলো না।
তাকে কাল সন্ধ্যায় বিমর্ষ দেখেছি।
আমার দুঃখে কোনো প্রলেপ নেই, জেনেও
তাকে আঘ্রাণ দিতে গিয়ে দেখি,
সেও তার বিবর্ণ দশা ভুলে গেছে।
সেই তো মানুষের প্রথম অবাধ্যতা। 

(২)

এক সাদা রোমশ ভেড়ার পিঠে 
হাত বুলিয়ে দেয় এক রাখাল।
স্বর্গের কাছে তার বাড়ি।
ঘুঘুশীতে গাছে গাছে ঘুঘু ডাকে।

এমন জড়োসরো শীতে সে হঠাৎ উদ্দাম হয়।
ইথারের আকাশ থেকে একটা দৃঢ়তা তার বুকে নেমে আসে।
আগুনের ঝলকানি তাকে বেপরোয়া করেছে।

একটা ধোঁওয়া - সাদা আর আঁকাবাঁকা -
তার ভেতরে সাদাটে মেয়ের মতো কার মুখ?
প্রেমিকা, না নরকের আলো?
সাম্যের বোঝাপড়া এখানে কি ভালো?

বুকের ভেতর থেকে স্বার্থপর মানুষটা হাসছে।

তবে কি মন মানে, প্রতিশোধ-পাঠ?
না, ততোটা কি স্থবির হয়েছি?
দ্যাখাশোনা করে করে দিন কেটে যায়।
রাতে একটা নিষ্ফল কবিতার কাছে গিয়ে বসি।
ব্যস, শুধু ওইটুকু বুকে নিয়ে ঘুমোই।
ওহ্, ভুলে গেছি,
ভেড়াটা আসলে এক মেয়েহরিণীর গতনাম! 


(৩)

কবিতা হতেই পারে তোমার মুখ।
অন্ধকার; গালে কোনো জলছাপ নেই - 
মাঝরাতে উঠে বসে জল খাওয়া নেই।

এসব কি স্মৃতির কথা?
স্মৃতিতে তো তেমন  কেউ নেই! 
এসব কবিতার কথা।
উরু ভাবি, স্তন ভাবি,
সবই তো ভাবায় অন্য কেউ!
আকার, আকৃতির কি  কোনো মানে নেই?

একটা বিশুদ্ধ স্নানঘর আমি কি কখনো চাইবো না?
কেন চাইবো, আমি তো সাঁতার জানি না!
ডুবসাঁতারের প্রাণীরা তোমার কোমর ছুঁয়ে যায় - 
আমি কি সেভাবেই তোমাকে আড়াল করে দেখবো?

স্নানঘরে কতো পোকা হয়!
শরীরে কোথাও সাবানের মুক্তি লেখা নেই!
অথচ স্বপ্নের ভেতরে আমি সাবানের ফ্যানাই দেখছি।
স্নানঘরে ললিত বাজলে তুমি চলে এসো।
কাছের সাইবেরিয়া থেকে,
মাত্র দেড়, দু-ঘণ্টার রাস্তা হবে হয়তো!

তুমি একটা ন্যাকা মেয়ে! 


(৪)

আপনি কি সমুদ্রে যান?
গেলে অন্ততঃ দোতলায় ঘর বুক করবেন।
স্নানঘরে গান করতে করতে কেউ সঙ্গম করে?
আপনারা করবেন।

গভীর জঙ্গলে যান।
অনেক বড়ো বড়ো গাছ আড়াল করে রাখবে।
মাঝরাতে হাতির ডাক শুনবেন,
আর আদরের তীব্রতা ভয়ে আরো কাতর হয়ে উঠবে!
আপনাকে ব্যাচেলার বলে মনে হবে।
দুজনেই ভয় পেতে পেতে,
একে অপরকে জড়িয়ে ধরবেন।

একটা সিগারেট জ্বালাবেন।
না খেলেও, একটা দুরন্ত ভালোবাসার পর,
হোটেলের ঘরে ধুপের মতো করে সিগারেট জ্বালাবেন!
দেখবেন, শুদ্ধতা আসছে।
দুর্জয় ঘাঁটি মানে প্রেম!
কিন্তু সর্বনাম কে?

সত্যিই এমন করে ভাবিনি।
নিজেকেই 'তুমি', আর 'আপনি'-র 
বাঁধনে বেঁধেছি নাকি?
কবিতা লিখলে কেউ যদি নিজের হয়ে যায়,
তাহলে বেঁচেই আছি।

ও, হঠাৎ-কথাগুলো আপনার নয়।
এখনো স্বার্থপর নিজেদের হঠাৎ মিলিয়ে দেয়।
আমি মাটির চেয়ে কাদা বেশি ভালোবাসি,
এই বলে দিলাম...হ্যাঁ,
একে আবার নাটুকে কবিতা বলে ভাববেন না! 

দিয়ে দিন।
কেউ কিছু চাইলে দিয়ে দিন!







সুচেতা মন্ডল

নির্ঘুম                              


কথার ভেতর রাত গভীর হয়।
ঘুমের মধ্যে দেখি শঙ্কাভরা মুখ
ঝুঁকে এসেছে বুকের কাছে।
স্বপ্নের ভেতর মুখ 
মুখের আদল
এই আলো হওয়া সবুজ 
জীবন মৃত্যু পারাপার
ঘুরে ফিরে জাপটে ধরে আগের মতো
মনে পড়ে পরিচিতি 
খুঁজে বেড়াই পরিচয়।
নির্জনতার স্নায়বিক বিপর্যয়ে স্মৃতি উল্টে উল্টে যাই।

প্রতিরোধহীন যন্ত্রণার মধ্যে ডুবে যেতে যেতে তোমার কথাই মনে পড়ে পার্থ।


তারপর ঘুম পায়,
শুধু ঘুম পায়।

June 28, 2021

ঋভু চট্টোপাধ্যায়

  কবিতা ১  

 যেভাবে ঠিক যেভাবে 


যদি ভিজে যাওয়া ব্যাকরণ হয় তবে সেই

বইএর ‘অ’ থেকে চাঁদ অবধি পড়বার পরেও

অমুক আর তমুকের ঝগড়া মিটল না।

এই যে অনাবিল একাকিত্ব ঘাড় থেকে নেমে

যায় তাসের বোঝা আর রোজরোজ বেড়া ভাঙার

গান শোনায় অকৃতদার সন্যাসি,

তাদের দেখেই হৃৎপিণ্ড নিঃস্ব হয়,

ফুসফুসের ভেতর প্রদাহ মানেই কারো

কারো উনিশ পোয়া।এইবার ভূত নামুক

ভেতরের স্রোতগাছ থেকে খসে যাক পাতার দেহ

ভোরবেলা কলতলায় লাইন পড়ে থাকে।


কবিতা ২

না হয় মৃত্যু অন্ধকার 


আবার অন্ধকার, চিরকুটে মৃত্যুদাগ, গলা অবধি ভেঙে

যাওয়া ধ্বজাভাঙা মেরুদণ্ড, পাশে শুধু বেঁচে থাকবে

যদি মৃত্যু আজ অবধি না এসে থাকে।

কিছুটা একাকিত্ব এখনো ছড়িয়ে পাতা ঢাকা চেনা রাস্তায়,

ছবি নেই তোলা নেই ক্ষতিপূরণের কোন সমীকরণ।

তবুও স্লোগানের মাঝে জেগে থাকা চারাগাছ

পালা করে জলের অপেক্ষায়।

আশা আছে কাজ হবে আজকের দিন কেটে

গেলে, কাল থেকে জমকালো ভোর।


কবিতা ৩

বদলের বদলে যাওয়া 


বদলে যায় মানচিত্র, পুকুরের পাশ থেকে

উঠে আসা সেদিনের স্রোত বিহীন স্মৃতিপথ

তাকে ছুঁয়েই আজকের ইতিহাস।

কিভাবে বদলাবে, ভুল বুঝে কিভাবে বদলালো?

রাস্তাঘাট পেরিয়ে এড়িয়ে যাওয়া যাবে?

ঐখানে ভাঙা বাড়ি, ঐখানে নদীতে মাঝ ভাঙা মানুষ।

এখন, মাটি মানে কাঠখড় রঙ ও কাটাকুটি।

বদলে যায় অথচ হৃৎপিণ্ডে কাঁটা লাগে।

কাঁটা তারে আটকে আছে হাত,

এমনই কি স্বপ্ন ছিল অথবা অন্ধকারের আরেক প্রপাত।













খগেশ্বর দাস

 সোনালী বিছানা

                                        
আমার বিকেল গুলো ক্রমোজ্জ্বল                                                                 সাঁঝের আঁধারে আমি খুঁজি পারাপারহীন ঘাটের ওপারে                     ঘোলাটে আঁধার কানাগলি 
এপারে উত্তপ্ত রোদে ঘুড়ি ওড়ালাম কিছুকাল । 


ছেঁড়া ঘুড়ি গোত্তা খেয়ে ছিঁড়েছে লাটাই প্রত্যাঘাত ফিরেছে দ্বিগুণ 
      কিছু কিছু বর্শা ফলক কিছুটা  মিষ্টি গান । 

নদীও জানেনা কেন এত ফিসফাস 
                                চোরের মতন কথা বলা
দু'পা এগিয়ে দশ পা পিছনে পেছোনো  
হারাবার ভয়ে ভয়ে এ জীবন 
                            হয়না নিজের করে পাওয়া। 

ম্রিয়মান স্রোতে নদীর জোয়ার শিহরিত
               হায় হায় আমি খুঁজি ভাটির উজান
নদীপথে জলতল রপ্ত হলে গনগনে শিখা
              মুগ্ধ শীতল ছোঁয়ায় সোনালী বিছানা । 







গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...