June 30, 2021

স্নেহাশিস মুখোপাধ‍্যায়

 কেউ কিছু চাইলে দিয়ে দিন  


(১)

তারপর সে তাকে ভুলে গেলো।
দুঃখের কথা আর কাউকে জানানো হলো না।
তাকে কাল সন্ধ্যায় বিমর্ষ দেখেছি।
আমার দুঃখে কোনো প্রলেপ নেই, জেনেও
তাকে আঘ্রাণ দিতে গিয়ে দেখি,
সেও তার বিবর্ণ দশা ভুলে গেছে।
সেই তো মানুষের প্রথম অবাধ্যতা। 

(২)

এক সাদা রোমশ ভেড়ার পিঠে 
হাত বুলিয়ে দেয় এক রাখাল।
স্বর্গের কাছে তার বাড়ি।
ঘুঘুশীতে গাছে গাছে ঘুঘু ডাকে।

এমন জড়োসরো শীতে সে হঠাৎ উদ্দাম হয়।
ইথারের আকাশ থেকে একটা দৃঢ়তা তার বুকে নেমে আসে।
আগুনের ঝলকানি তাকে বেপরোয়া করেছে।

একটা ধোঁওয়া - সাদা আর আঁকাবাঁকা -
তার ভেতরে সাদাটে মেয়ের মতো কার মুখ?
প্রেমিকা, না নরকের আলো?
সাম্যের বোঝাপড়া এখানে কি ভালো?

বুকের ভেতর থেকে স্বার্থপর মানুষটা হাসছে।

তবে কি মন মানে, প্রতিশোধ-পাঠ?
না, ততোটা কি স্থবির হয়েছি?
দ্যাখাশোনা করে করে দিন কেটে যায়।
রাতে একটা নিষ্ফল কবিতার কাছে গিয়ে বসি।
ব্যস, শুধু ওইটুকু বুকে নিয়ে ঘুমোই।
ওহ্, ভুলে গেছি,
ভেড়াটা আসলে এক মেয়েহরিণীর গতনাম! 


(৩)

কবিতা হতেই পারে তোমার মুখ।
অন্ধকার; গালে কোনো জলছাপ নেই - 
মাঝরাতে উঠে বসে জল খাওয়া নেই।

এসব কি স্মৃতির কথা?
স্মৃতিতে তো তেমন  কেউ নেই! 
এসব কবিতার কথা।
উরু ভাবি, স্তন ভাবি,
সবই তো ভাবায় অন্য কেউ!
আকার, আকৃতির কি  কোনো মানে নেই?

একটা বিশুদ্ধ স্নানঘর আমি কি কখনো চাইবো না?
কেন চাইবো, আমি তো সাঁতার জানি না!
ডুবসাঁতারের প্রাণীরা তোমার কোমর ছুঁয়ে যায় - 
আমি কি সেভাবেই তোমাকে আড়াল করে দেখবো?

স্নানঘরে কতো পোকা হয়!
শরীরে কোথাও সাবানের মুক্তি লেখা নেই!
অথচ স্বপ্নের ভেতরে আমি সাবানের ফ্যানাই দেখছি।
স্নানঘরে ললিত বাজলে তুমি চলে এসো।
কাছের সাইবেরিয়া থেকে,
মাত্র দেড়, দু-ঘণ্টার রাস্তা হবে হয়তো!

তুমি একটা ন্যাকা মেয়ে! 


(৪)

আপনি কি সমুদ্রে যান?
গেলে অন্ততঃ দোতলায় ঘর বুক করবেন।
স্নানঘরে গান করতে করতে কেউ সঙ্গম করে?
আপনারা করবেন।

গভীর জঙ্গলে যান।
অনেক বড়ো বড়ো গাছ আড়াল করে রাখবে।
মাঝরাতে হাতির ডাক শুনবেন,
আর আদরের তীব্রতা ভয়ে আরো কাতর হয়ে উঠবে!
আপনাকে ব্যাচেলার বলে মনে হবে।
দুজনেই ভয় পেতে পেতে,
একে অপরকে জড়িয়ে ধরবেন।

একটা সিগারেট জ্বালাবেন।
না খেলেও, একটা দুরন্ত ভালোবাসার পর,
হোটেলের ঘরে ধুপের মতো করে সিগারেট জ্বালাবেন!
দেখবেন, শুদ্ধতা আসছে।
দুর্জয় ঘাঁটি মানে প্রেম!
কিন্তু সর্বনাম কে?

সত্যিই এমন করে ভাবিনি।
নিজেকেই 'তুমি', আর 'আপনি'-র 
বাঁধনে বেঁধেছি নাকি?
কবিতা লিখলে কেউ যদি নিজের হয়ে যায়,
তাহলে বেঁচেই আছি।

ও, হঠাৎ-কথাগুলো আপনার নয়।
এখনো স্বার্থপর নিজেদের হঠাৎ মিলিয়ে দেয়।
আমি মাটির চেয়ে কাদা বেশি ভালোবাসি,
এই বলে দিলাম...হ্যাঁ,
একে আবার নাটুকে কবিতা বলে ভাববেন না! 

দিয়ে দিন।
কেউ কিছু চাইলে দিয়ে দিন!







No comments:

Post a Comment

গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...