January 30, 2021

সাত্যকি

প্রাচীন অক্ষর 

জিজ্ঞাসা কিছু থেকে যায় 
প্রাচীন বটের মতো 
তাই প্রত্যেকক্ষণে নদী যৌবন পায়
তরুণ জিজ্ঞাসার ঢেউ নেমে আসে
ছোবল দেয় তীরে  

আমি পাড়ে বসে দেখি 
আরও কিছু জিজ্ঞাসা জেগে উঠে 
ঘিরে ধরছে আমায় 

প্রাচীন বটের শিকড় জুড়ে তখন
উপপাদ্যের মতো সন্ধ্যা সাজ নেমে আসে 



সব্যসাচী পণ্ডা

শরশয্যা

মীমাংসা চাইনা।কেন আমাকেই আঘাত করল না
সহস্র তীর,
কেন মাটির উপর ভাসমান নয় আমার হৃদি,
কেন জিহ্বা স্পর্শ করল না সুরধুনী বারি?
মীমাংসা চাইনা।
শুধু জানি
তুমি যে শরশয্যা পেতেছিলে যুদ্ধ শেষের বাসনায়
তার পাশে প্রেমের মালা হাতে
আমি তোমারই সম্মান রক্ষাকারী।

কমল দলিনী
    
তবে কি অপেক্ষারা আরো বেশি দীর্ঘ হবে
আশ্চর্য বাগানে আরো কিছু দেরিতে ফুটবে ফুল
কমল আর কমলদলিনীর রোদ পোড়া বিকেলে
জামরুল শাখে আরো কিছু বন্য দিনের ছুটি...
এসো অপরূপ,আমার সকল খেলায়,সকল ভালোবাসায়
অজস্র বার স্বর্ণমুদ্রার মতো তোমাকেই গুনি।



অভিষেক সৎপথী

বাহন বৃত্তান্ত

দাঁড়কাক তুই আমার বাহন।তুই বললাম বলে রাগ করিস না।এই চিনার রোদের দরজা-তালসারি-এই কাজুবাদাম বাগিচা-শ্রাবণ স্নান -বৃদ্ধার মতো ঝুলে পড়া মেঘ,আয় রে আয়,তুই ডাক কা-কা-কা-কা-আ।

আয় রে আয় একটু শলা পরামর্শ করি,বোস। বাহনের এত্তো ভীড়!কি মুশকিল!কে কার বাহন?কি করে বুঝবো তুই আমার বাহন?বেশ মুশকিল।

আয় রে আয় তৈরি যে হয় সাংকেতিক মোর্সবার্তা
ঐ চোখ টেপাটেপি ঐ কনুই।ঐ দ্যাখ ঐ পা চাটছে ও কার বাহন!কার?এই মাত্র লাভ ইমোজি দিল,না কেয়ার,যা গিয়ে দাঁড়কাক তুই দ্যাখ ওটা কার বাহন।

হাগামাছি তুই আমার বাহন।তুই বললাম বলে রাগ করিস না!এই আমড়া রঙের দোলনা-আমলকি সারি-এই রবার বাগিচা-অগ্রহায়ণ স্নান-আমের চুষা আঁটির মতো সাদা সাদা মেঘ,আয় রে আয়,তুই ভনভন কর ভ-ভ-অ-ভ-ভ-অ।




সুফল সান্যাল

অকুস্থান

লাল আলো জ্বলছে...
সন্ধিস্থলে এক অশীতিবালিকা
ট্রেন দ্রুততম গহ্বরের কাছে
যাদুদন্ড শব্দব্রহ্মের
মানব সমাজের গর্ত খোঁজে
একটা রাত
বিশ্রাম খাতিরে
সৃষ্টির অকুস্থান দর্শনে
যোনী গভীরে যে কালাশনিকভ চর্চা করে...
ভ্রুণ ফাটে নিষিদ্ধ প্রহর
গোনে। ঘাটে ভেসে যাওয়া নারীদেহ...

ভাতের মাড় 

মা অসুস্থ।বহুদিন ধরে শরীর খারাপ।কিছুতেই সারে না। ফ্যানের মাড় গালতে গিয়ে তার কানে আরশোলা ঢুকে যায়। আমি অফিস যাই।ফোনে সারাদিন বকতে হয়।তারপর ক্লান্ত হয়ে তিমি মাছের মত জল ছুড়ি।গহ্বরের কাছে আলিবাবার মত অপেক্ষা করি।চল্লিশ চোর উড়িয়ে নিয়ে যাবে অজানা সৈকতে। নিখোঁজ নাবিকের মত ঘুম ভাঙবে তপ্ত বালির স্পর্শে।আমার তখন তোমাকে প্রয়োজন হবে না। কিন্তু খিদে তো পাবেই।তখন ভাতের মাড় গালবে কে?! এই অজানা সৈকতে কী আরশোলা আছে?



দীপ্তেন্দু বিকাশ ষন্নিগ্রহী

বাসা

এ পথের শেষে সব মোহ নির্বোধ
শিকল ছিঁড়েছে পাখি 
সংসারের ঘামগন্ধ ক্ষত
এতদিনের কতকিছু খড়কুটো 
তুচ্ছের ওম ওতোপ্রোতো.. 

সন্ধ্যার নিঝুমতায়
স্ট্রিট লাইটের নিচে জমাট কুয়াশায় 
কোনো ছায়ায় পরিচিত ভাষা নেই
সাধ্যের বাসায় আজ অপেক্ষা নেই
তালাচাবি নেই..



সুকুমার কর

সাংসারিক

    
তোমার কপটতা তোমার প্রেমিকা না জানলেও
তোমার বৌয়ের তা নখদর্পনে জেনে রেখো,
সুযোগ বুঝে সেও সাপ হবে।
সময়ের জালে রাগারাগি আর মাখামাখি
মিলে মিশে একাকার।

তোমার দুর্বলতা সন্তানের অজানা নয়।
তুমি অগ্নিশর্মা হলে,
বাবার রাগের আগুনে তাদের মা ছাই চাপা দেন।
তাদের খুশিতে তুমি আহ্লাদে গলে জল হলে,
তাদের মা খোটা দিয়ে বলে উঠবেন, 
"আদরে আদরে বান্দর করছো "।

তোমার বৃদ্ধ মা তোমার ভাঙা ঘরের
দেওয়ালে মাটির প্রলেপ দেন।
উৎসবের দিনগুলো ফিরে আসে।
সংসারের গোলকধাঁধায় পথ হারালেও
পথও বিনুনি খোলে।
সমস্যার পাহাড় তৈরি হয়
তবুও  পাহাড় যতই রুখা হোক
ঝর্না তারি ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে।



উপেক্ষিৎ শর্মা

 অবাক দর্শন


            নির্মল বিশ্বাস থেকে মুছে ফেলি গ্রহপতনের বিচ্ছুরণ কোথায় তোমার ঘুমকাতর চোখের ভূমধ্য নাভিকুণ্ড? কোথায়  তোমার সাগরজলে প্রবাহিত অমানিশা? সাতরঙা প্রেমের      রসালাপী উড়ন্ত চাকতি তুমি। পৃথিবীর অভিকর্ষগ্রন্থি খুলে      গেলে যে উদ্গিরণ তাকে আলিঙ্গন করো।সামাজিক দূষণরক্ষক অনাদিকে তোমার মহাচুম্বনের শেষ অঙ্গীকারে        আপাদমস্তক লেহন করো।পেতে পারো অমূল্য বৈভব।

তিরতির করে বহে যাওয়া শান্ত নদীজলে আমাদের অবগাহণের শূন্য অবকাশ। তোমার পরিপুষ্ট জঙ্ঘাশানুদেশে মাথা রেখে শুয়ে আছি। যাকে তুমি প্রবঞ্চনা বলো। আমি বলি পক্ষীসমাচার। সেই পাখি ভোররাতে বলে যায়, ‘নগ্নতাই আমাদের শেষ সম্বল’। তাকে আমি ধার দিই ঘুমকাতর নাভিকুণ্ডের যৌনলোলুপতা। সে চোখ তোলে। অশ্রুসজল  রিক্ততায় এই তার অবাক দর্শন।




রবি শঙ্কর মণ্ডল

অপরাহ্ন

এক হলদে গর্ভকেশরে অপরাহ্নের স্বনন,
দেহাতীত সীমায় বাধ্য জলাধারে উচ্ছাস
ভোর করে লেখা সংলাপ
কখনো পিঠ বাড়িয়ে চড়া জোছনা মেখে,
অল্পবয়সী দ্রাঘিমায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে জন্মক্ষণ।
ভিন্ন ভিন্ন কলমে বঞ্চিত হচ্ছে তিতাস নদী,
পুষে রাখা অন্তিমে বাড়তি কান্নার পরোক্ষন তটরেখা।

এক এক অপরাহ্ন দেখার দাওয়াতে;
বাড়ি ফেরার উষ্ণ চুমুক,সিগারেটে ভেজাল তকমা
আর,দক্ষিণী জানালার কার্নিশে-
তোমার অভিমান অনুবাদের বাক্য স্থিরতা।
ক্ষয়াটে ইশারায় সোহাগীকে ছুঁতে পারার ভিড়...
তছরূপে অপরাহ্নের অভিশাপ,
সাথে অপেক্ষায় থাকা অর্বাচিত তিস্তা।

মায়া

এক মরিচবাহী খেয়া মুখভারের মিছিলে ফেলেছে নোঙ্গর
জমা বই খাতার ভিড়ে দু পয়সার বকেয়া,
সর্বনাশিনীর আকন্ঠভরে মৃত্যু কাব্য:
দরদামে আজপিত এক ফালি মায়া।

হাত রাখা আক্ষেপের ছাওয়ায়
চেনা জন্মান্ধতা আমার বামে
কোষে কোষে অন্ধকার যাচ্ছে সেঁধিয়ে
তুমি আস্ত শরীর জুড়ে নামিয়েছো শীত,
বেতস লতায় আনচান খোয়াব
পাঁজরের রিডে মিহি মায়াক্ষত।




সমাজ বসু

 একমুঠো সর্ষের গল্প

কোন একদিন কারো চলে যাওয়ার মুহূর্তে
হিমশীতল নৈঃশব্দ্য জুড়ে মিশে থাকে
কারো অসহায়তা,
ব্যথায় গ'লে গ'লে একসময় নিভে যায় মোম-রাত্রি-
তারপর কারা যেন তাকে শোনায়-
সেই একমুঠো সর্ষের গল্প,
গল্প শুনতে শুনতে দুচোখের আবেগ মুছে উঠে দাঁড়ায় সে-
বোঝে
গল্পের ভাষায় নিহিত জীবনের বীজ।
এভাবেই-
সময়ের আগল খুলে অতর্কিতে কারো চলে যাওয়ার মুহূর্তে
বারে বারে ফিরে আসে, একমুঠো সর্ষের গল্প-
আর সেই গল্প শুনতে শুনতে শুনতে...

অনেকদিন দেখা না হ'লে

অনেকদিন দেখা না হ'লে, না দেখার দুঃখই বাড়ে-
নদী জানে,
চাঁদও জানে আমার এই দুঃখের কথা।
অথচ-
কী এক রঙীনের আড়াল দিয়ে কত অনায়াস
তুমি হেঁটে যাও-
রবীন্দ্রসদন মেলা প্রাঙ্গনে কিংবা
হুসেনের জলনারীর খুব কাছে,
আর আমি-
পাথরের বোবাবৃত্তে বড় বেশি অস্পষ্ট এক একটা দিন
নির্বাসনের প্রলম্বিত ছায়ায় জেগে থাকি একাই।

অনেকদিন দেখা না হ'লে...



নির্মাল্য মণ্ডল

 নিঝুম রাতের কান্না

হঠাৎ যখন ঘুম ভাঙে মাঝরাতে 
আলো জ্বালতেই দেখি হৃদয়ের গভীর থেকে
পাখা সম্বলিত পিঁপড়েরা আলোর দিকে উড়ে যায় 
যেখানে মৃত্যুর সাক্ষাৎ নিশ্চিত জানে,
জেনে ইচ্ছেগুলো মরে যায়।

বাথরুমের ট্যাপ থেকে জল ঝরবার শব্দ 
শুনি শুয়ে শুয়ে 
ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে যায় স্বপ্নগুলো !

বেওয়ারিশ কুকুর বিলাপে জানায় যত কষ্ট 
ট্রাকের চাকার নীচে পিষ্ট কবিতার ব্যাকুলতা
কাঁদে অসহায়, তবু জেগে থাকে বিদগ্ধ মন 
মুখ থুবড়ে নর্দমায় পড়ে অনুভূতি। 

মাঝরাতে প্রায়ই আমার ঘুম ভাঙে আজকাল। 

খেলা

বারবার পড়ন্ত বেলা পশ্চিমে ঢলে পড়া সূর্য 
আর নারীর কনে দেখা আলোয় গোধূলি লগন আসে।

যতনে সাজিয়ে রাখা শাড়ি খুলে রোদে মেলে ধরা 
নিজস্ব উচ্ছ্বাস। আমার সম্মুখে শুধু ধুলো ও বাতাস। 

উষ্ণ আপ্যায়নের আড়ালে বিজ্ঞাপনী প্রচারের কৃতকৌশল
অনন্তকালের যত ধূসর পান্ডুলিপির যেন কবে উন্মোচন ? 

গোবেচারা রাখালের শেষ বাঁশি বেজে গেছে কবে ?
এবার তোমার পালা 
এভাবেই জলখেলার দিন শেষ হবে। 

নিরন্ন জটিল অঙ্কে ভরপেট কেন সুখী নয় 
এ হিসাব মেলাতে বসে শুধু দেখি বিস্ময়। 





অমিত চক্রবর্তী

জানি না কোন্ সমুদ্র বা অতল গহ্বরের দিকে

জানি না কোন্ সমুদ্র বা অতল গহ্বরের দিকে ছুটে যায়
আমাদের ছাতাপড়া মনগুলি -
পাক খেয়ে খেয়ে প্রতিদিন,সম্মোহিত জাগরণ বেশে।
চোখ বুজোলেই কিন্ত ছলাৎ-ছলাৎ সুর
বাঁ হাতে শাড়ীর পাড়, ডান হাতে রান্না,
ভারসাম্যে ইঁট থেকে ইঁট বৃষ্টিদিনের উঠোনে।     

জানি না কোন্ সমুদ্র বা অতল গহ্বরের দিকে ছুটে যায়
আমাদের সংসারী মনগুলি
মথ,পতঙ্গের মত ধাঁধা লাগা চোখে।
ক্রমাগত সময় পেরিয়ে সে সমুদ্র, গহ্বর হয়তো বা মিলে একাকার -
কোথায় যে উজ্জ্বল বনভূমি, রঙচটা নষ্ট ছবি
সবই দেখি নিশ্চুপ সময়ের বুনো শাসনে।

সঞ্জীব সেন

নিজস্ব কান্নার এপিটাফ

‘সমাধিপৃষ্ঠার’ মত পড়ে থাকে অগ্রন্থিত কবিতার পঙক্তিরা
আজ যদি  দু-ফোঁটা চোখের জল ফেলো ,
দেখবে  আবার ফিরে এসেছে তারা,

বিকেলের আলো কমে আসে এখানে
তুমি তখন ছাদে উঠে আসো,
স্তব্দতার পাঠ।ঝরাপাতার ক্লাস
কুড়তে কুড়তে ক্লাস ফুরালো
মালতীবালা বিদ্যালয়,
নাম ছিল পারুল
সেই মুখ  আজও মনে পড়ে !

এতদিন পর, ডাক দিলে,ছাদে
টবের ভিতর এক মৃত কবির হাড়গোড়,
তাতে একটা নয়নতারা গাছ
এবার দু ফোঁটা চোখের  জল ফেল ,
খোঁপার কাটার  মত অহংকারী চোখের জল
স্তব্ধতা।রাত্রিযাপন।কবির ক্লাসে ছিলে একটা দিন

আজ সেইসব মৃত কবিদের মিটিং
কারুর হাতে একটা তাম্রপত্র, কারুর হাতে অগ্রন্থিত কবিতাসমগ্র।কবিতা সন্ধ্যায় ডাক পাইনি
এই সব কবিরা মাঝে মধ্যে জ্বলে ওঠে
তাদের দেখা যায় না,
শুধু ধিক্ ধিক্ আগুন জ্বলে  রাতে...

শঙ্খ চক্রবর্ত্তী

একা, বড্ড একা হয়ে যাচ্ছি দিন দিন।

আর ভালো লাগছে না এই নাটক,এই মঞ্চ,এই অভিনয়
সব ছেড়ে চলে যাবো হঠাৎ করে
সময় গড়ালে দূরত্ব আসে,শুভ কাজে বাধা পড়ে যায়
যা আমি চাই না।

এই চলে যাওয়া টুকু স্থগিত করতে পারলে মুক্তি পাবে আমার রক্তখেকো আত্মীয়-স্বজন, মশার দল
আমি তাদের প্রতি ঘৃণা দেখাতে পারি না।
বন্ধুরা কেমন আছে সেটুকু জানি মোটামুটি, আমার খবর তারা জানে না, বোঝে না

মা বাবার জন্যে মন খুব খারাপ ক'দিন। আমি চলে গেলে তাদের কে দেখবে এইসব আরকি
আর বান্ধবীকে বলে দিয়েছি ভালো থাকতে।
সবাই খুব কান্নাকাটি করবে হয়তো 

একটা দুটো কি তিনটে সপ্তাহ ধরে

কিন্তু সেটুকুও কি মানসিক কিংবা শারীরিক অশান্তিসমূহবশত অভিনয় নয় ?

গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...