February 27, 2022

তৈমুর খান

কবিতাগুচ্ছ


 ১

সাক্ষাৎকার


 ভালো করে দেখা হলো না কিছুই

 শুধু ঝরনার কাছে দু'দণ্ড বসেছি

 অবগাহন করিনি কার জলে


 এলোমেলো বাতাস, ঝরা পাতা আর পাখির গানে

 অর্ধেক বয়স পেরিয়ে গেল


 বালিশের নিচে কার চিঠি রেখেছিলাম?

 আজ আর কিছুই মনে নেই

 ঝাপসা হয়ে গেছে চোখের দৃষ্টি

 নিজেকেই আর নিজেই চিনতে পারি না


 একটা মৃত বাল্যকাল আর উত্তর না দেওয়া চিঠির অভিশাপ

 সমস্ত গোধূলি জুড়ে বিস্ময় চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে

 আমি সাক্ষাৎকার দিতে এসে শুধু নীরবতাই অবলম্বন করেছি!


 ২

ছাতা


 আমার মাথার ওপর কোনো ছাতা ছিল না

 একে একে সমস্ত বর্ষাকাল গেল

 একে একে সমস্ত গ্রীষ্মকাল গেল

 বৃষ্টি আর বজ্রের সামনে দাঁড়ালাম

 সূর্য আর তাপের সামনে দাঁড়ালাম

 

 আমাকে সবাই ভয় দেখাল

 আমাকে সবাই মৃত্যু দেখাল

 আমাকে সবাই অসুখ-বিসুখ...


 আমি ছাতা খুঁজতে খুঁজতে

 কখন নিজেই নিজের ছাতা হয়ে গেছি!


  ৩

চরিত্র


বিশ্বাস সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে

 অবিশ্বাসের দিকে চলে যাচ্ছে

 সিঁড়ির নিচে আমরা দোলাচল


 সবাই চরিত্র বিক্রি করছে

 আমরা শুধু খণ্ড খণ্ড চরিত্র সেলাই করছি

 আমাদের চরিত্ররা বাউল হয়ে যাচ্ছে


 এই মায়াভুবনের মানববাগানে

 কামনার বিসর্পিল সর্পগুলি

 শুধু গর্ত খুঁড়ে চলেছে সীমাহীন অন্ধকারের দিকে



নিমাই জানা

তিনটি কবিতা


(১) বাৎসায়ন ও ফিজিওলজির পাঠ



প্রজাপতি হত্যার পর ব্রহ্মা এসে বসলেন আগুন আর স্বাহা নারীর কাছে
প্রতিটি প্রহর জুড়ে ধনাত্মক কার্নিভোরাসেরা ফিজিওলজির খাতাটি ভরিয়ে ফেলছেন লবণাক্ত রঙের আকাশ দিয়ে
দ্বিপদ উপপাদ্যের লিঙ্গহীন পুরুষেরা ফিউচার পার্ফেক্ট কন্টিনিউয়াস ভেঙে ভেঙে একটি পাথরের থালা তৈরি করবে যেখানে ইলোরা নারীটি বাৎসায়ন পাঠ করিয়ে যাবে অ্যারিস্টোটলকে, একটি পাথরের শিল্পী ময়ূরীর ডান পালককে ক্রুশবিদ্ধ করছেন গন্ধরাজের ছিদ্রালো বোঁটা দিয়ে
মরুদ্যানের ঘোড়াটি নেমে আসার পর বিশুদ্ধ পালকগুলো জড়িয়ে ধরবে একটি আনাস্তেসিয়া নারীটির ডান স্তন ,
প্রতিটি স্তনে তার ম্যালিগনেন্সি কালো কর্দমাক্ত পোকা কিলবিল করে খাচ্ছে স্নানঘরের পিচ্ছিল ধোঁয়াকে
আমি বৃষ্টি দানাকে ভয় পাই একটি অশ্বমেধ ঘোড়ার মতো , দক্ষ রাজার ত্রিশূল নিয়ে নিজের হৃদপিণ্ড ফুটো করছি সতী চিহ্নের জন্য
আমার সহস্রকাল জুড়ে রজঃস্রাব ঘটেনি


(২) শতকহীন চিতাকাঠ  ও পঞ্চপান্ডব গর্ভাশয়



যারা গভীর রাতে আলপথ ধরে নেমে যায় তাদের ডান হাতের কমন্ডুলটি সাদা কাগজের মতো চৌকো
প্রতিটি বর্গক্ষেত্রের অন্তরীক্ষে বাসা বেঁধে আছে প্রাচীন স্বরলিপি আমি তাদের ক্ষতিগ্রস্ত মুখের বামদিকে ফুটিয়ে চলি কিছু ধোঁয়াহীন ধূপ ,
জ্বেলে দিলাম প্রদাহ শ্মশান ক্ষেত্রের এক চন্দ্র , একমাত্র সাক্ষী রেখেছিল তার শতকহীন চিতা কাঠের জন্য
নিজের দেহে রাখা পুরুষের ওপর বিষধর পরাক্রমীরা বিষ প্রয়োগ করছে প্রতিটি রাতে
দ্রৌপদীর পাঁচটি গর্ভাশয় ছিল পঞ্চপান্ডবের জন্য
অর্জুনের বাকল আমাকে হত্যা করতে উদ্যত অথচ আমি একটি মাছের মতো ঠোঁটে নিয়ে শুয়ে আছি সারারাত
আমার পালকের উপর কোন জেরুজালেম শহরের যুবতী নেই,  যারা প্রতিটি আলপথ ভেঙে ভেঙে কম্বোজের পেঁচানো গোখরো হয়ে যায় তার  নিচে বৃত্তাকার শুয়ে থাকি গোপন প্রস্থচ্ছেদ নিয়ে সেখানের আয়নাটি আরো প্রাচীন
আমাকেই দাঁড় করায় ডটেড এক্সট্রা টাইম সঙ্গম চিত্রের কাছে,  প্রতিটি রাতে আমি অসহায় হয়ে বেরিয়ে আসি একটি উলঙ্গ ঈশ্বরীর পেছন থেকে
প্রতিটি দাঁত আসলে অজুত বিনাইন অজগরের নাম

(৩) লিঙ্গদণ্ডের আত্মহত্যা ও শতানীক


আমার সারা দেহে ভেজা ঈশ্বরীর কালো রং, যৌনাঙ্গ চিহ্ন মানেই মাথায় শিউলিপুর অথবা উন্মত্ত সাঁকো ঘাট নোনা হতে হতে কালিদহের ভেতর সঙ্গম করছে সহস্র কামদেব
ধর্মক্ষেত্রের দিকে চলে যাওয়ার পর রাসায়নিক দেহ ঘরের ভেতর আমার বাবা চৌকো রঙের একটি ধুতি পরে দাঁড়িয়ে আছে বেগনভেলিয়া ফুলের দলমন্ডল নিয়ে
প্রতিটি লিঙ্গদন্ডের আত্মহত্যা আসলে একটি বাকল মোচনের নাম
পায়ের ছাপের নিচে আরো কৃষ্ণবর্ণ হয়ে ওঠে চাঁদ
গোপন ঘরের ভেতর যে একাকী থাকে সে মহাজাগতিক আলো শুষে নিচ্ছে দ্রাঘিমাহীন ইচ্ছামতীর নারীর মতো
তার কপালের কাছে অদৃশ্য দুটো নৌকো আমাকে মৃৎশিল্পী করে গেছে আজীবন কপর্দকহীন করে
আমি ধনাত্মক সংখ্যা রেখার উপর দাঁড়িয়ে ঈশ্বরীর অজন্তা শরীর নিয়ে ক্রমশ পূর্ণ সংখ্যার মানুষগুলোকে গিলে খেলাম
গিরিখাতের পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে আমাদের অন্তিম বাসনার কাহিনী, বিষ্ণুপুরাণ
কোন সংঘাতের কারণ নেই বলে ভেসে আসছেন সমুদ্রের কিনারে নাভি বের করবেন ব্রহ্মা নিউক্লিওলাস থেকে
আমরা জয়ঘণ্টা বাজাবো নকুল আর শতানীক হয়ে

অমিত চক্রবর্তী

 রঙচটা


ভিজে রাস্তায় তেলের প্যাচ

আসলেই চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া বুদবুদ কিন্তু সে

অন্তত আলো তাই ভাবে

যখন বাহার তৈরি করে সঞ্চারে বা ব্যতিচারে,

যেন ফেনা, যেন প্রজাপতির পাখায় পাখায়

রঙমশাল।

  একই কৌশল আলোর, কিন্ত ঘৃণিত

হয়ে ওঠে তেলের প্যাচ বা ভেজা রাস্তায় পেট্রোল,

মুখ থুবড়ে তেল, সিঙ্কে ব্যাড়বেড়ে

চামচ, হাতা, লম্বা সরু কাচের গেলাস।


 ঘৃণিত হয়ত পাখায় রং বেশি বলে

অথবা জলের সম্মেলনে বিদেশি বা রঙচটা,

অন্যরকম ভাষা, অন্যরকম অ্যাকসেন্ট।

তারপর ঘৃণা শেষ হলে,

সাবান জলে ধুয়ে গেলে সেই প্যাচ,

তারা এখন ধূপধুনো দেয় রোজ, গান গায় বেসুরো, বেতাল,

শেষে একটা স্ট্যাচু বানায় স্মরণে - বাহারী

রঙের অনেক ছোপছোপ সারা গায়ে,

দাঁড় করানো চৌরাস্তার মোড়ে।



সব্যসাচী পণ্ডা

 আততায়ী

 

তোমার দুচোখে স্থির অপলক মায়া

যেন অনন্ত সন্ধানে ভেসে গেছে সব 

দুএকটি চুলের দীর্ঘ ক্লান্তিহীন যাতায়াত সে মুখে

সরিয়ে দেব ভাবি কতবার।...


এ হাত আততায়ী,অপরাধী, এই ভেবে সরিয়ে নিই বারংবার।




∆ ৩০ জানুয়ারি,২০২১।১৬ মাঘ,১৪২৮।রবিবার।সন্ধে ৭.৪০টা।পাঁচমুড়া,বাঁকুড়া।

পলাশ দাস

 চায়ের কাপ   


পিঁপড়ের দৌড়াদৌড়ির ভিতর 
বৃষ্টি নেমে এলে 
গুলে যায় পথ 
 
তারপর ইতস্তত ঘোরাঘুরি আর 
উৎস সন্ধানে নেমে যাওয়া
 
দিন থেকে রাত     
রাত থেকে দিন 
স্টেশনের ব্যস্ত ধুলোর শরীরে 
ফেলে দেওয়া চায়ের কাপ  
                                                        

হামিদুল ইসলাম

বৃষ্টি                      

 অপেক্ষার প্রহর গুণি 
রোদে রোদে আগুন ঝরে 
পুড়ে যায় অসবর্ণ সময়। পরিচিত মুখ   ।।

নৈর্ঋতে অশনি সংকেত 
ইষ্টনামে কাটে না সংকট
মুছে যায় অতীত
তবু আমাদের শরীরে এখনো বয়ে চলে পূর্ব পুরুষের শ্বাস   ।।

ছায়ারা গায়ে মাখে বাসি ভাতের সুবাস 
আমরা করবি বিষ ঠোঁটে নিয়ে পাড়ি দিই জীবন   ।।

শব্দরা স্লোগান তোলে 
মৃত‍্যু ছড়ানো শিয়রে গুণি নশ্বর শ্বাস
আহত হৃদয়ের জলে ক্লান্তির মেঘ    ।।

ছাদের জলে অঝোরে বৃষ্টি নামে 
ভিজে যায় রাত ।।


গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...