April 25, 2021

গোলাম রসুল

 মেঘ বৃষ্টি ঝরিয়ে কি গান গায় আমাকে ঘিরে


যে জলধারা বয়ে যায় সন্ধ্যায় তাই দিয়ে 
আমি লিখি
জলের সাগর
উত্তাল হয়েছে ডাঙা

আমি সেই দ্বীপ 
ভেসে যাই চাঁদের মতো

সংগীতের সুরের মতো মেঘ বৃষ্টি ঝরিয়ে 
কি গান গায় আমাকে ঘিরে
যদি ওই বৃষ্টির ফোঁটা মাটি থেকে হাত 
বাড়িয়ে আমাকে ডেকে নিত
মাটির ভেতরে আপন করে রেখে  দিত 
আমার হৃদয়

জলময় ঝিঁঝিঁ পোকা
জোনাকির আলো
শেষ হারা কত নির্ঝর
কিভাবে পেতে সেই একটুখানি বুক
যার  ওপর দাঁড়িয়ে ওই বিশাল আকাশ







         

পিয়াংকী

জলের দাম কতো 

 

শেষ কবে নিস্তব্ধতার পাশে একটা পাথর  রেখেছিলাম ... মনে পড়ছে না
শেষ কবে সরাসরি আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম... মনে পড়ছে না 
শেষ কবে একটা জীবিত মানুষের সাথে রোজকার  হিসেবপত্র নিয়ে বসেছিলাম... মনে পড়ছে না 

আসলে কিছুই মনে পড়ে না। 
যা যা মনে করতে চাই সারাটা বয়স  ধরে
তার কিছুটাও যদি  নির্ভীক রঙে ডুবিয়ে মেলে দিতে পারা যেতো কাপড় শুকোনোর দড়িতে... 
যদি ঘুমের ঘরে আস্ত একটি সূর্য রেখে আসা যেতো 
 যদি একটা রাষ্ট্র কেনা যেত জলের দামে 

সত্যি তো এটাই যে, মনে করার অজুহাতে আদতে আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে ভিজিয়ে দিই 
আগলে নেবার জন্য পাঁচিল খুঁজি।
সামলানোর জন্য আঁচলে গিঁট বাঁধি 

প্রিয়তম... 
আমাকে পুড়িয়ে দিতে অন্তত একটিবার  ঘরমুখো হোয়ো 





তুষার ভট্টাচার্য

 স্বপ্ন কলমে


একদিন কবিরাই শাসন করবে এই
রৌরব পৃথিবী,
তখন অনন্ত ক্ষুধার চারণভূমিতে
ওই দিগন্তের রামধনু রঙের আকাশ থেকে ঝরে পড়বে ধবধবে
ফুলের মত সাদা ভাত ;
নদীর পাড়ে জোছনার হলুদ পাড়
আঁচল পেতে অসফল কবিরা
দু'দন্ড ঘুমোবে প্রশান্তিতে ;
তারপর কবিদের স্বপ্ন কলমে উঠে আসবে শুধু নতুন বৃষ্টি জলের ভিতরে জেগে ওঠা জীবনের অফুরান জলতরঙ্গ গান,
সেই দিন আর খুব বেশি দূরে নয় l




দীপঙ্কর সরকার

একাকীত্ব


বড় একলা হয়ে পড়ছি দিনকে দিন

যতই বয়স বাড়ছে পৃথিবীটা ক্রমশ

সরে যাচ্ছে দূর বহুদূর ।


স্মৃতিগুলো সব আবছা হয়ে পড়ছে

কাউকে বোঝাতে পারছি না সেই বেদনার্তি

একলা একা গুমরে মরছি শুধু ।


যতদিন যাচ্ছে একাকীত্বের বোঝা চেপে

বসছে আরও , কাউকে দোসর পাচ্ছি না

একাকীত্বের ভারে ন্যূজ্ব হচ্ছি ক্রমশ ।



শিরোনাম 


জ্যোৎস্নায় ধুয়েছি হাত , সেই ঘ্রাণ লেগে আছে ঠোঁটে

ঘাসে ঘাসে সেই বার্তা গেছে রটে ।আশঙ্কা যতই অমূলক          হোক ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে একটু তো ডরাবে নিশ্চিত ।


আমার ও সেই দশা জ্যোৎস্না ধোয়া এই হাতে খেয়েছি

আমিষ ও অ্যালকোহল বন ভোজনের রাতে , দারুণ

হুল্লোড়ে কিছুই ছিল না খেয়াল ।


কখন যে জ্যোৎস্না মেখেছি সারা গায়ে , ম ম গন্ধে

আকাশ গিয়েছে ভরে , রাত্রি লিখিত সেই সুসমাচার

এখন খবরের শিরোনামে ।



ঐতিহ্য 


গল্পের ফ্রেমে বাঁধা জীবন আমাদের যেন পৈতৃক ছায়া

হেঁটে যায় সুদূর আলেয়ার পথে ।ধিকিধিকি জ্বলে মরুভূমি

বালিয়াড়ি জুড়ে রোদের কুর্ণিশ শুধু , বৃষ্টিরা সরে যায়

নিরাপদ তফাতে ।


হাপিত্যেশ চেয়ে থাকে কাঁটা গুল্ম চাতক পাখির মতো

এক ফোঁটা বৃষ্টি ঝরে না তবু , নির্দয় মেঘেরা ওড়ে না

আকাশে । 


বাতাসে আলোর ফুলকি ভাসে দুলকি চালে দু-একটি

মরুভূমির জাহাজ দেখা দেয় কদাচিৎ তপ্ত বালুচরে ।







কৌশিক চক্রবর্ত্তী

কবিতার ল্যাব



এতটুকু শুকনো চারকোল আর মিশ্রণমতো অ্যামোনিয়া। প্রয়োজন হয়েছিল নীলচে ফেনার। চোখে মুখে মেখে যেভাবে নিজেকে জ্বালিয়ে নেওয়ার কথা ভাবা যেত অনায়াসে, সেভাবে হাত পুড়িয়ে ফেললে আর কখনো ধরা যাবে না মিনিবাসের পুরনো হাতল। অন্ধকার ঘরের আচ্ছন্নতা মাপার সময়ও ল্যাবে উপজাত মৌল হিসাবে জন্ম নিয়েছে এমনই কিছু কবিতারা। এরা আসলে গনগনে রোদ্দুরে সদ্য টাঙিয়ে দেওয়া একএকটি জামার নির্যাস। জন্মের আগে এরাই কেউ অক্ষরের শরীরে লাগিয়ে রেখেছিল পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের ছাই। পরীক্ষামূলক ভাবে কেউ সদ্য বিক্রিয়ার পরেই নির্ণয় করতে বসেছিল অজানা যতিচিহ্নের সঠিক যোজনী।

এতকিছুর পর আমি অপেক্ষায় রয়েছি। কবিতার ল্যাবে রোজ ইচ্ছেরা বড় হচ্ছে অসংখ্য টেস্টটিউবে; সংজ্ঞা নিরূপণের আগে প্রতিটি চরণের শেষে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের ভূমিকা নেবে বলে। উপযোগিতা অনুসারে দাম ঠিক হচ্ছে তাদের। পর্যায় সারণীর সমস্ত কৃতিত্ব যথারীতি এড়িয়ে গেছে মেন্ডেলিফ। ১৬তম মৌলের ঠিক পরে নতুন শ্রেণীতে অবস্থান করেছে বিক্রিয়াজাত কবিতারা। 

কবিতার ল্যাবে আজ জড়ো হয়েছে বানভাসি ফসল আর নুইয়ে পড়া বাতিল তলপেট৷ অন্ধকার আর অবিকৃত ইচ্ছেগুলোর সঙ্গে মিশ্রবিক্রিয়ায় এরা আঙুল তুলতে শিখছে চোখে। আজ হালকা শূন্যের থেকেও এরা সাহসী করে তুলেছে নিজেদের৷ এবার প্রয়োজনে বিক্রিয়ার ঠিক আগে দাবী করবে অবশিষ্ট শুকনো চারকোল। এরা জানে, আগামী সময়ে এরাই পুরস্কৃত কবির দিকে তুলে ধরবে অভিযোগের আঙুল।




অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়

 তিনটি কবিতা

১৪২৮

আমার অক্ষরগুলি থেকে,
নিঃস্তব্ধতা চুঁইয়ে পড়ছে,
টুপটাপ শব্দের মতোই,
ঝরে পড়ছে মাটির উপরে,
একলা হয়ে ঝরতে থাকা,
বৃষ্টিফোঁটার শব্দের মতোই,
এই শব্দেরও একটা মানে আছে,
একটা ডাক আছে,
রংবেরঙের একেকটা ছন্দ আছে,
বারান্দায় সাজানো কাঁচ-বোতলগুলোর মতোই,
আমার অক্ষরগুলি থেকে নিঃস্তব্ধতা চুঁইয়ে পড়ছে,
টুপটাপ শব্দের মতোই,
যেখানে দারুণ একটা সময়,
অলক্ষ্যে প্রবাহিত,
নির্বাসনে থেকেছি অনেক দিন,
এবারে কখনো সূর্যের মতোই,
ভোর হয়ে আসবে,
সকাল হয়ে আসবে,
আমার কলম নামিয়ে রাখবো,
অবাক হয়ে দেখবো,
এই পৃথিবীর আলোয়, রূপোলী ভবিষ্যৎ!

ফুল

যা কিছু ভেবেছিলাম,
অথবা ভেবেছি এখনও,
সরিয়ে রেখেছি সব,
নিশীথ রাত্রিতে,
গুহার কন্দরে, আগুন জ্বালাবো,
সকলের অগোচরে,
একাকী আজ,
চকমকি পাথর এনেছি,
অদূরে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত,
জাহ্নবী করুণার মতো,
আমিও গৃহে বন্দী আজ,
ঝকঝকে শুভ্রতা,
বৈদ্যূতিন আলোতে হঠাৎ,
মনে পড়িয়েছে,
এ শহরে নতুন বছর,
নতুন বছর এসেছে,
একমুঠো ফুল হয়ে,
অঞ্জলী দেবো,
সহস্র বছরের তরুটিকে,
যার নাম ভালোবাসা,
যার নামে সভ্যতা অক্ষয় হয়ে বেঁচে আছে।

খবর

প্রতীক্ষা করে আছি,
সময়ের অপেক্ষায়,
দুরন্ত শহর দেখেছি,
তোমার দুচোখে,
স্তব্ধ হয়েছিল,
সেই বিকেল,
বৈশাখী গোধূলিতে,
সবকিছু শুরু হয়েছিল,
আমাদের আলাপ,
বিচ্ছেদ,
আমাদের সবকিছুই।

এখন কেবল সময়ের মতো পড়ে থাকা,
একফালি হাসি,
নিজস্বতা,
আত্মবিশ্বাসে ভরপুর সময়,
আমি এখন অফিসে যাই।
আমার আগুন শহরকে দিয়েছি।
আমার বারান্দা সাজিয়েছি,
চেনা অচেনা সমস্ত কবিতাতেই, প্রতিক্ষণ।






সিঞ্চন কুমার

স্থাপত্য            ‎     

আগামীর রোদে মুছে ফেলো রংচটা দেয়াল!
নিজেকে চেনাও নতুন করে।

মুক্তির আহ্বান লেগে থাকে শিকড়ের অন্তরে
গাছেরা শ্বাস নিক খোলা আকাশের নীচে।

ভুল আর দ্বন্দ্বের লুকোচুরি বন্ধে
ছুঁড়ে দাও বাণ বাণীর।

লগ্ন বয়ে যাক
বিয়ে ভেঙে যাওয়া মেয়ের বুকেও জমে থাক ভালোবাসা।

স্থাপত্যে গড়ে উঠুক বিশ্বাস
বিশ্বাসের ভিড়ে জুড়ে থাক মানবিকতা।



রথীন পার্থ মণ্ডল

 দু'টি কবিতা


 বর্ণপরিচয়

ভিতর থেকে ভিতরে এখনও বেজে ওঠে,
অ আ ক খ - আলো গান, একটা ইতিহাস। 

যেন দীর্ঘ অন্ধকার শেষে নক্ষত্রপাঠ
এক আশ্চর্য নিদান, নিরক্ষর পথে পথে। 

শুরু হয় বিচ্ছুরণ, প্রতিটি বর্ণের থেকে 
অক্ষরে অক্ষরে প্রকৃত সন্ধান। 

বাক্য মনের গঠন কিংবা নব জাগরণ
পথ করে দেয়, চিনতে শেখায়। 

কখনও রাখালের সুরে, কখনো সুবোধ ছায়ায়
প্রতিটি  যুক্তাক্ষরেই যুক্ত হয় এক মিলন মন্ত্র।


আগাছার স্তুতি

যে পৃথিবীর কালগর্ভে হারিয়ে যায় না নকশালবাড়ি 
যে সমাজের আঙুল চুষেও নিমেষে উৎখাত হয় জমিদারী 
সেখানেই জন্মেছিল আমাদের মতো বুনো ঘাস
প্রতিপালনের দায়িত্ব না নিলেও যে নিজের গরজে
বাড়তে থাকে, ক্রমশঃ বাড়তেই থাকে 
সাধ্যমতো  বিস্তার করে নিজের সাম্রাজ্য 
তবুও লোকে তাকে আগাছাই বলে। 

পায়ে মাড়াতে মাড়াতে তারই ওপর দিয়ে তৈরি হয় পথ
সে পথে সবুজ শহীদ হয়, তবু টিকে থাকে আগাছা
খটখটে শুকনো হয়ে তখন অপেক্ষারত, আর 
সেই অন্তিমকালে আমি বারুদ মাখবো আঙুলে।
আগাছা বেঁচে থাকে সূর্যের পথ চেয়ে। 









জয়ীতা চ্যাটার্জী

জ্বর

শীতরাত ধীরে ধীরে আসছে নেমে,
আমার খুব ভয় করে, খুব ভয়
সমস্ত কাজের শব্দ ধীরে ধীরে যাবে থেমে 
জ্বর আসবে আমার গায়ে খুব
দরজা ভাঙা, দালান ভাঙা জ্বর
বুকের ক্ষেতে ফাটল ধরবে
তুষারপাতে কাঁপবে আমার শরীর থরথর।
চুপ করে যাবে নদী, চুপ করে যাবে গাছেদের কথা
নিঃশব্দে আগুনের ঢল নেমে আসবে শরীরি বন্দরে
মৃত ইচ্ছা, মৃত স্বপ্ন, মৃত প্রেম
জ্বর আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে নতুন খেলায়
চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই তোমার বুকের সেই রক্তদৃশ্য
খাঁ খাঁ দুপুরের মত আমার গায়ে জ্বর
তোমার সমস্ত থাবা ভরে দিয়ে যাই খাবারে
ঘন বটবৃক্ষের ছায়া বুনে দিয়েছি আকাশের মাপে মাপে
তবু আমি ভয় পাচ্ছি, আমার শরীর কাঁপছে থর থর।।





দেবকুমার মুখোপাধ্যায়

বিখ্যাত আমেরিকান কবি এবং জীবনীকার কার্ল স্যান্ডবার্গের "Lost" কবিতার ভাষান্তর করেছেন দেবকুমার মুখোপাধ্যায়। 

হারিয়ে যাওয়া


নিঃসঙ্গ এবং একা
সমস্ত রাত লেকের ওপর
আস্তে আস্তে কুয়াশা ছড়িয়ে যাচ্ছে,
আর একটা নৌকো
চিৎকার করছে ক্রমাগত
যেন একটা হারিয়ে যাওয়া শিশু
কান্নায় ভেঙে পড়েছে,
অবিরত বন্দরের বুক
আর চোখ খামচাচ্ছে। 






গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...