August 29, 2021

স্নেহাশিস মুখোপাধ‍্যায়

যেন প্রেম যেন উচ্চাশা 

 

(১)

 

যেন প্রেম। যেন কয়েক ঘণ্টার অবলোকন।  

প্রথমে কপাল - কপালের মাঝখানে জাগতিক জলছাপ -  

তারপর লোকালয় ছেড়ে নিরুদ্দেশ!

সোনার হাঁসের জন্য, সারাক্ষণ,

আমি তোমার ছবিতে হবো পাগলপণ!

সোনার হাঁস, তুমি শুধু অবলোকন।  

 

গায়ে গায়ে বাড়িগুলো আমি আর তুমি।

পায়ে পায়ে, মাথায় মাথায় ঠোকাঠুকি -

চোখের অমৃতবর্ষণ!

আমি তোমার জন্য হবো পাগলপণ!

 

যেখানে কেউ নেই, সেখানেই প্রেমকে মানায়।

শুধু মূর্তির মতো কিছু গাছের ছায়া চাই।

নদীতে পাথর থাকবে নদীর আবেশে...

বার বার একই কথা লিখে আমি প্রেম বুনে যাবো।

প্রেমের কথা বার বার বলতে হয়।

যেন পৃথিবীর সবচেয়ে পুণ্য কোনো ধর্মের গান!

এই অবলোকনে শুধু তীর্থের মতো শরীর মিশে যাবে।

একশো শ্লোক আমি যদি দেবভাষায় লিখতে পারতাম...

এই আক্ষেপ থেকে যাবে।

 

(২)

 

একটা ট্রেনের মতো ছিপছিপে দিন নেই।

‘পুনশ্চ’-এর কবিতাযাত্রা নয়,

আমি চাই থেমে থাকা পরখ করতে।

অথচ তেমন সম্বল নেই।

রথের রশিতে টান দিতে হবেই।

নাহলে, চলার মানে থেমে গিয়ে রাতের ঘুম কেড়ে নেবে।

এই শীতের দিনে আমি হিমাচলে গিয়ে তোমাকে খুঁজবো,

এই-ই যদি একটা প্রতিজ্ঞা হয়ে উঠতো!

যুক্তি-তর্ক ছাড়া কেন প্রেম আসে না উন্নত?

উন্নত শৃঙ্গের মতো তার মন হবে আলোর মুখ।

আমার লেখার ভাষা মধ্যযুগীয় হয় হোক,

সমস্ত পাথরের গায়ে গায়ে অমর লিপির মতো বাণী হোক,

তোমাকে হঠাৎ দ্যাখার মতো এক একটা কল্পনা

আমি যেন প্যাঙং হ্রদের ধারে নীল জলে খুঁজে নিতে পারি।

এতোখানি অবলোকনের গান কে গাইবে বলো?

একটা ট্রেনের মতো - ছিপছিপে ট্রেন...

আমি তার আত্মা হয়ে যেন জলে নেমে যেতে পারি।

 

(৩)

আলাপ না হলে গাঢ় প্রলাপ হয় না।

যারা বোঝে, তাদের প্রেম হয় না।

একটা গুহার কথা ভাবো তুমি রানী!

তোমার মন খুব শুকনো হয়ে আছে।

বুকের ভেতরে কোনো উন্মাদ আগুন জেগে আছে।

সে আগুন ধ্বংসের। প্রেমে কিছু ধ্বংস হয় না।

তুমি গুহার ভেতরে চলে যাও। 

বেশ শীত যেসব গুহায়, বেশ অন্ধকার যেসব তন্দ্রায়,

বেশ বরফ যার আগে-পড়ে জ’মে ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে,

তুমি সেখানে আমার জন্য আগুন জ্বালো।

কি অবিশ্রাম লেগে থাকা রাত - বুকের ভেতরে জড়োসরো হয়ে আছে।

আমি তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে মানেবই মুখস্থ করবো।

তুমি অর্ধনারীশ্বর হয়ে থেকো না।

তিস্তার বর্ষা হয়ে, গ্রহ ও নক্ষত্রে উপচে ওঠো।

প্রাণ-বসুন্ধরার অনেক ঘুমের শিস শুকনো ধারণার মতো একপেশে।

তোমার গানের জড়তার পাঁপড়ি খুলে দেবে কে?

সেই ধাবমান কাল গড়িয়ে গড়িয়ে কোনোদিন ওপরে উঠবে?

ধাবমান নয়, ধবধবে লতানো ত্রিতাল তুমি।

তোমাকে কি শহরে মানায়?

তুমি যেন মধ্যবর্তী - কথা আর কথার ছলনায়।

 

(৪)

 

এভাবে কে লেখে বলো?

 

           ফুরিয়ে যাওয়ারা?  

 

তাই ভাবো বুঝি?
           দ্যাখোনি, চোখা-শব্দগুলো জলছলছলকলকল...

ঢলঢলে মুখ তোমার -

           জ্বলজ্বলে ঘড়ি।

আরো বেশি গভীর হতে চাও?

           পরো তবে মাঘের আশাবরী-শাড়ি। 

(৫)

প্রথমেই তেহাই গেয়ে সব ভুল করি।

আমি তো তেমন করে গান জানি না!

গানের কৌশল কি করে জানবো বলো?

কিন্তু তেহাই কতো আন্তরিক!

           তিনবার নয়, অনেক তেহাই গেয়ে ফেলি।

ঘুমের ভেতরে আমি বৈষ্ঞব -

           বার বার করে তোমার নামের তেহাইগুলো পড়ি।

আমি কি তোমার জন্য তির্যক হবো?

           তির্যক হলে তোমার আরাম হয় বুঝি?
তুমি খররোদ কোনোদিন ভালোবাসোনি?

           আমি তো নিজেই তির্যক রশ্মির মতো জেগে থাকি।

 

(৬)

 

উপচে ওঠা দুধের মুখে উপচে ওঠে ঘুম।

নরম নাভির বন্দরে জিভ কতোটা ভিজলো,

আমার ইচ্ছেশক্তি তা কি জানে?

তুমি ভাবছো বন্দর তো পারের মতোই ক্ষীণ!

তাকে কেন কেন্দ্রবিন্দু করতে চাইছে দিন?

এমন কি সেই গভীর গর্তে কেন্দ্র থাকে নাকি?

কে মাপবে সেই জরীপকার কি শরীর মেপে দ্যাখে?

দেখলে; পেতো...বন্দরটাই সমুদ্র-কেন্দ্র।

নাহলে কি আসা-যাওয়ার রাস্তা হতো নাকি?

উপচে ওঠা দুধের মুখে উপচে ওঠে ঘুম।

নরম নাভির বন্দরে জিভ কতোটা শুকনো,

তোমার ইচ্ছেশক্তি তা কি জানে?

আর সমুদ্র কি বাধাবন্ধহীন?

হীন লাগে আমার, যখন স্বপ্নে তোমায়

দেখেছি অন্নদা! কিন্তু তুমি অন্নদা নও,  

রেলের একটা দু-তিন ঘণ্টা যাত্রা।

তোমার বুক পাথর হলে পাথরে ফুটতো নতুন একটা পাতা।

তুমি যেন হঠাৎ করে শহর ছেড়ে অজ পাড়াগাঁয় গেছো।

তোমার মুখে এতোখানি মর্ম খুঁজি নাকি?

তোমার ঘরের ভেতর একটা কাচের আলমারি -

তার ভেতরে বই আর কাচ, মাটির বাসনকোসন রাখা।

তুমি তার পাশে দাঁড়িয়ে আছো লজ্জাবতী লতা।

আমি প্রথম দিনের মতো করে তোমাকে খুঁজছি।

দ্যাখো, যারা কবিতা লেখে, তারা কেমন সংসারী!

আমি অন্য মুখে তোমায় ভুলে আবার খুঁজছি।




No comments:

Post a Comment

গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...