July 31, 2021

স্নেহাশিস মুখোপাধ‍্যায়

 গুচ্ছ কবিতা


(১) 

হিঙ্কার 


জলাভূমির পাশে দাঁড়িয়ে ঘ্রাণ নাও!

সেই-ই আদিগন্ত তাড়নার জল।

হাঁদা-গঙ্গারাম হয়ে হাঁটু মুড়ে ছুঁয়েছো অজগর!

প্লাবন ছাড়া কাগজের পাতায় কোনো নদীর নাম নেই।


হাতে ও কিসের দাগ - সাদা, সাদা - জানো?

ও হাতে রক্তের স্রোত কোথায় যেন থেমে আছে! 

কনুইয়ের ছিলা টান করো!

তীর সঞ্চয় করো। 

ছুঁড়ো না কখনো - যোজনে যোজনে। 


(২) 

দহন 


শব তুলেছি কাঁধে।

কুচো কুচো কাগজ করে পুড়িয়েছি সব!

মুঠো মুঠো ছাই ঢেলেছি 

শীতল শীতল ঘাটে।

কতো রক্ত মিশিয়েছি রক্তহীন এই হাতে।

আমার শরীরখানা জলে ছুঁইয়ে দে না! 

দেখি, কেমন গঙ্গা বইছে এখন?

জল, নাকি স্ফুলিঙ্গ - সব সন্দেহের কণা! 

ছোঁবো না, ছোঁবো না জল,

ছোঁবো না মা বিশুদ্ধ হাওয়া! 

পড়ে থাকতে দে মা,

ধানের ক্ষেতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দে!

তোর শরীরে সূর্য ডোবার আলো।

জ্বালবো, এবার জতুগৃহের যতো দহন, 


সব জ্বেলে দেবো... 


(৩) 

ভালোবাসা শুধু


আমি ভালোবাসা, শুধু, বলি!

আমি তোমার হয়েই চলি!

তুমি হাসিভরা মুখে ভরিয়ে দিয়েছো

অফিসের ঘরগুলি!


তুমি উত্তর থেকে হাওয়া ডেকে নিয়ে

বৃষ্টি এনেছো শহরে।

তাই জল ভরে আসে চোখের পাতায়

বিকেলে কিম্বা দুপুরে।


দীপ নিভে গেলে আকাশ-সিন্ধু

ওপারে বাজালো বাঁশি।

আমি একবার বলি, সববার বলি,

তোমাকেই ভালোবাসি। 


আমি ভালোবাসা, শুধু শুধু বলি!

আমি তোমার হয়েই চলি! 

তুমি হাসিভরা মুখে ভরিয়ে দিয়েছো

অফিসের ঘরগুলি!


(৪) 

লিভারের অসুখ 


কোথায় রাখবো তোকে?

দানে, ধ্যানে, অন্নে না চালে?

কোথায় রাখবো তোর পেটফোলা

আদমসুমারি! 

কোথায় আড়াল করবো আমাদের মমি-দেহগুলো? 

এখানে থাকিস না দিদি,

চিনে নে অন্য কোনো তীর! 


হা, সুর, বাজো না,

হে তাল, দ্রিমি দ্রিমি বাজো।

ওর শরীরে দশার্ণব ঢেউ - 

জল, শুধু জল তুমি - আজও!


দ্রিমি দ্রিমি বাজো তাল,

মহামারি ছড়াও গো সুর! 

এখানে থাকিস না দিদি,


যা চলে যা, ছাইভস্মপুর!


(৫) 

অবতার 


অগ্নি, আলো দাও কাকের সমাজে।

 বিষ্ঠা ছাড়ো কাক! 

পনেরো দিন, একমাস, পঁয়ত্রিশ বছরের বিষ্ঠা ছেড়ে,

দুর্মুখ - উড়ে যাও পুশিল-মেধার তীরে তীরে!  

অগ্নি, আলো ঢালো!

পালকে যারা মরে গেলো - 

পালকের ছদ্মবেশে -

কাক থেকে কাকতাড়ুয়া -

তাদের কঙ্কালপীঠ

দেওয়ালে ঘুঁটের মতো পাঁচ আঙুলে বসিয়ে দিয়েছে।

দেওয়ালে রঙ ছিলো - রঙ ছিলো দেওয়ালে।

কারচুপি হয়ে গেছে রঙ - চুপ, চুপ,

শুনতে পেয়ো না কেউ, পোশাক খুলছি, চুপ!

দেখতে যেয়ো না কেউ, ৯-কার তুলছি। 

শিরাতে উদ্ভট গন্ধ, ৯-কার ফুলছে।

অগ্নি আলো ঢালো, ৯-কার পোড়াও!

৯-কার পুড়ছে, বিন্দু, গোত্র, বিন্দু...

সিন্ধুর কাম, কামের গোত্র...

ঈর্ষায় মরে গেছি 


রাম!  


(৬) 

ডুব 


ডানা মেলার আগে

কার্জন পার্কের গায়ে শ্যেনপাখির দল

হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিলো।

দুপুরে গণেশ এ্যভিনিউয়ের মাথায় উড়ে এলো।

ডানায় বঙ্গোপসাগর। হৃদয়টা ততোখানি সাগর ছিলো না।

ডানা ঝেড়ে উড়ে চলে গেলো দূরে।

ম্যানহোল খুলে দিলো কর্পোরেশন।

ম্যানহোল ইঙ্গিত করে চলে গেলো 


অতল গহ্বরে!






No comments:

Post a Comment

গুচ্ছ কবিতা।।তৈমুর খান ।।

সমস্ত যুদ্ধের পর   অনেক মৃত্যুর পর এই বেঁচে থাকা  হেসে ওঠে মাঝরাতে  কোনও পিয়ানোর সুরে  খোলাচুল উড়ে আসে তার  বুকের ভেতর থেকে জ্যোৎস্নার ফণা ...