দায়ক
ধর্মাধিকরণ প্রাঙ্গণের কৃষ্ণসিংহাসনে আসীন দণ্ডদায়ক মহিষধ্বজ ধর্মরাজ,
দক্ষিণ হতে ভেসে আসছে নরপিশাচবর্গের বিনীত আর্তনাদ, উত্তর হয়ে সুমধুর রুদ্রবীণার তান। এই স্বর্গ নরকের মধ্যবর্তীতে দণ্ডায়মান, আমি, একাকী সঙ্গী সাথীহীন
“ তুমি দুরাচারী, কপটী, কী লাভ অর্জিত করলে এই অধর্মসম্পাদনে ? ” ধর্মশমন প্রাঙ্গণের সর্বসম্মুখে জিজ্ঞাসা করলেন আমারে ।
সম্পূর্ণরূপে ক্ষান্ত তখনও হননি তিনি । ক্রোধান্বিতরূপে পুনরায় সূর্যপুত্র বলে ওঠে, “ ধিক , ধিক জানাই তোমার মতিকে, কেন হলে না ধর্মের শরণাগত ? ”
এইকথা শুনে সহাস্যে প্রতিবচন করি, “ আমি ? সবাই যদি হয়ধর্মের বশীভূত , ধর্ম আবির্ভূত হবে কী করে ?
ধর্মের জয় যদি হয়ে থাকে পূর্বলিখিত,
তবে অধর্মকে আলিঙ্গন করতেই হবে ধর্মকে
ধর্মকে বাঁচতে, ধর্মকে চলতে প্রতিপদে
সাহায্য করবে অধর্মই , অন্যথা নয় কিছুই; আমি এই করেছি মাত্র, ধর্মরাজ, আমি এই কার্যের কেবলই নিমিত্ত ।
কেবল নহে ভীষ্ম, আমারও ছিল ভীষণ প্রতিজ্ঞা ,
যখন আমার পরিবার ওই ভীষ্মের আদেশক্রমে ছিল কারাগারে বন্দি, অসহায়, অভুক্ত ;
তখন কোথায় ছিল এই ধর্ম ? এই সদাচার ?
তারা তৈরী করেছিল আমায় নিজস্ব মৃত্যুর পথ অঙ্কিত করে,
চুতুরঙ্গের ঘোটক
সেই শতজনের আশীর্বাদ আমার মস্তকপরে,
হে যম পাপ আমার পুন্য সমতুল্য
ছিল একটিমাত্র অভিলাষ ,
ভীষ্মের বংশ বিন্যাস ও বিনাশ ।
কে করেনি পাপ , কে করে না অধর্ম এই পটভূমে ?
কালদেব, ধর্ম তখনই করে জয় যখন তার বর্ম অধর্ম হয়
ধম জয়ী হয়ে কী সে পেল ?
যোগ্যপ্রাপ্যনিধি তো অধর্মের রয়ে গেল
আমার নামার্থ শুভ, নই শোক-অনুতাপে
শকুনি আমি ,
খলনায়কের বেশে আমিই নায়ক ও ধর্মদায়ক এই একছত্রভারতে। ”